একটাকাও পরিশোধ না করে চট্টগ্রামের একটি ডকইয়ার্ড থেকে ৭৪ কোটি টাকা মূল্যের দুটি জাহাজ কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও তার স্ত্রী নুরেন ফাতিমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি করেন ক্ষতিগ্রস্ত এফএমসি গ্রুপের হেড ক্লার্ক ফিরোজ আহমদ।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) পাঁচলাইশ থানার এসআই কামরুজ্জামান খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামলার বাদী এফএমসি গ্রুপের হেড ক্লার্ক ফিরোজ আহমদ এজাহারে হাছান মাহমুদ ও তার স্ত্রীসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামিকে আরও ১০-১২ জনকে যুক্ত করা হয়েছে মামলায়।
বাদী ফিরোজ আহমদ জানান, ঘটনাটি প্রায় সাড়ে তিন বছর আগের। তবে ওই সময়ে মন্ত্রীর ক্ষমতার ভয়ে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- হাছান মাহমুদের ছোট ভাই খালেদ মাহমুদ ও এরশাদ মাহমুদ, ব্যক্তিগত সহকারী এমরুল করিম রাশেদ, এবং তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান দ্য বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ নুর উদ্দীন ও প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ এরাদুল হক।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে এফএমসি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড রয়েছে। ওই ডকইয়ার্ড থেকে নির্মাণ বিল পরিশোধ না করেই ক্ষমতার জোরে একটি ফিশিং জাহাজ এবং একটি কনটেইনার জাহাজ নিয়ে নেন তৎকালীন মন্ত্রী হাছান মাহমুদের লোকজন। কনটেইনার জাহাজটি ছাড় দিতে সম্মত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের মারধর, অফিস ভাঙচুর ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে অস্ত্র ঠেকিয়ে স্ট্যাম্প ও প্যাডে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তারপর তাদের হয়রানি করা হয়।
জানা যায়, একটি কনটেইনার ও একটি ফিশিং জাহাজ নির্মাণের জন্য হাছান মাহমুদ ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন দ্য বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেসের সঙ্গে এফএমসি ডকইয়ার্ডের চুক্তি হয়। হাছান মাহমুদ ও তার স্ত্রী কোনো টাকা না দিয়েই ২৪ কোটি টাকা দামের ফিশিং জাহাজ ডেলিভারি নিয়ে যান। পরবর্তীতে ৫০ কোটি টাকা দামের কনটেইনার জাহাজটিও কোনো টাকা না দিয়েই ডেলিভারি দিতে চাপ দিতে থাকেন তারা। এ নিয়ে এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ তৈরি হয়। পরে টাকা পরিশোধ না করেই ডকইয়ার্ডে জোরপূর্বক ঢুকে জাহাজটি নিয়ে যান হাছান মাহমুদের লোকজন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ৭ মার্চ হাছান মাহমুদ ও তার স্ত্রীর নির্দেশে অন্য আসামিরা অস্ত্রসহ চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ এলাকার এফএমসি কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন। এসময় তাদের একজন দারোয়ান বাধা দিলে তাকে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন তারা। পরে কার্যালয়ে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আঘাত ও ভাঙচুর করে দুই লাখ টাকার ক্ষতি করেন। এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ইয়াছিন চৌধুরীর কার্যালয়ে ঢুকে অবৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে ১৫ থেকে ২০টি স্ট্যাম্প ও ডকইয়ার্ডের প্যাডে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নেন আসামিরা। পরে মামলা করার প্রস্তুতির খবর পেয়ে আসামিরা এফএমসি গ্রুপের কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানকে অপহরণ, গুম, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানো ও হত্যার হুমকি দেন।
এস আই/
Discussion about this post