দেশের নিম্ন আদালতে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে একসময় বাংলার প্রচলন খুব একটা ছিল না। তবে এক দশকের ব্যবধানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি উচ্চ আদালতে এখন বাংলায় রায়-আদেশের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এ পর্যন্ত কত রায় ও আদেশ বাংলায় হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যমতে, সব মিলে ২০ বছরে প্রায় অর্ধলাখ রায় ও আদেশ লেখা হয়েছে বাংলা ভাষায়। শুধু তাই নয়, উচ্চ আদালতে আবেদনও এখন বাংলায় করা হচ্ছে। ফলে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ স্বস্তিবোধ করছে।
তবে স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও বাংলা উচ্চ আদালতের ভাষা হয়ে উঠতে পারেনি। এখানে বার্ষিক ক্যালেন্ডার ও দৈনন্দিন কার্যতালিকা (কজ লিস্ট) কয়েক বছর ধরে বাংলায় তৈরি করা হচ্ছে। তবে বেঞ্চভিত্তিক এ তালিকা ওয়েবসাইটে মেলে ইংরেজিতেই। দাফতরিক অনেক কাজ বাংলায় সম্পাদন করা হয়।
কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম বাদে শুনানি হয় ইংরেজিতে, অল্প কিছু বাদে প্রায় সব রায় বা আদেশও দেয়া হয় ইংরেজি ভাষায়। আদালতের বেঞ্চ কর্মকর্তারা মামলার নম্বর ধরে ইংরেজিতে ডাক দেন। বিচারপতিদের যারা বাংলায় রায় লিখেন, তারা তা লিখছেন মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার টানে।
সম্প্রতি আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। দেশের ইতিহাসে এ মামলার আসামির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর রায়ের পৃষ্ঠার সংখ্যার দিক থেকেও এটি সবচেয়ে বড় রায়। সেই রায়ের ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠা বাংলায় লিখে আলোচনায় এসেছেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী। ওই রায়ের অনুলিপি সংরক্ষণের জন্য বাংলা একাডেমিতে হস্তান্তর করেছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।
হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বেশির ভাগ রায়, আদেশ ও নির্দেশ বাংলায় দিচ্ছেন। ১৫ হাজারের বেশি রায় বা আদেশ বাংলায় দিয়েছেন তারা। এ পর্যন্ত ৮ হাজারেরও বেশি রায় বাংলায় লিখেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল নিয়মিত বাংলায় রায় লিখে যাচ্ছেন।
এর আগে বাংলায় রায় লিখেছেন বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, বিচারপতি হামিদুল হক, বিচারপতি এ আর এস আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি একে বদরুল হক, বিচারপতি ফজলুল করিম, বিচারপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, বিচারপতি মো. আবদুল কুদ্দুস, বিচারপতি এসএম জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদিন, বিচারপতি মো. হাসান আমীম, বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ।
১৫ ফেব্রুয়ারি এক সেমিনারে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী পিলখানা হত্যা মামলার রায়টি কেন বাংলায় লিখেছেন তা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যা মামলায় যারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারা কনডেম সেলে থাকেন। যাদের শাস্তি হয়েছে তাদের অধিকাংশ আসামি অষ্টম শ্রেণি পাস।
তিনি আরও বলেন,আমি যদি ইংরেজিতে রায় লিখি তাদের অধিকাংশই রায়টি বুঝবে না। সম্ভব নয় ব্যক্তিগতভাবে এসে রায়টি কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে বুঝে নেয়ার। কোন অপরাধে এবং কোন যুক্তিতে তাদের সাজা হয়েছে- সেটা তারা যেন সহজে বুঝতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই রায়টি বাংলায় লেখা।
এফএস/
Discussion about this post