দেশের ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই নারী। তবে সেই নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে যে নীতিমালার প্রয়োজন, সেখানেও ব্যর্থ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
২০২৩ সালের এক তথ্যমতে, দেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০২টি, যার মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে ৪৮টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৮৯ জন, যার অর্ধেকই নারী। অথচ আবাসন ব্যবস্থা আছে ৪ থেকে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নারী শিক্ষার্থীরা জানান, অনেক জায়গায় ছাত্রী হোস্টেল থাকলেও তাতে নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা। নারীর আবাসন বলতে বোঝানো হয় যথেষ্ট পরিসরের জায়গা, নিরাপদ শৌচাগার ও অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা, কাপড় শুকানোর সুযোগ ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকা। কিন্তু নারী হোস্টেলগুলোতে দেখা যায়, সেখানে মানবেতর অবস্থা। গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় চাহিদার অভাবে দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই নারী শিক্ষার্থীরা। প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে নারী শিক্ষার্থীদের একাংশ ঝরে পড়তে দেখা যায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জানা গোস্বামী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের উদ্যোগে কেন আবাসনে যাচ্ছে না, এটা একটা বড় প্রশ্ন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও নতুন শিক্ষার্থী আকৃষ্ট হবে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নীতিমালা থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তা নেই, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইউজিসির উচিত ন্যূনতম আবাসনের ব্যবস্থা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাড়পত্র না দেয়া।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসন প্রসঙ্গে ইউজিসি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অনেক মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে থাকেন। যাদের নিজেদের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হয় টিউশনি করে কিংবা পার্ট টাইম চাকরি করে। সেক্ষেত্রে সঠিক আবাসন ব্যবস্থার অভাবে মানসিক ও আর্থিক-উভয় দিকেই বাড়তি চাপে থাকতে হয় তাদের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ রহিত করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ করা হয়েছে। এটিও অনেক পুরানো হয়ে যাওয়ায় এর ওপর কাজ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এই বিষয়গুলো নিয়ে নতুনভাবে বসা হবে, তখন এই সমস্যাগুলোও প্রাধান্য পাবে বলে জানানো হয়।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে নতুন নীতিমালায় বেঁধে দিতে পারে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এতে করে অন্তত আবাসনে স্বস্তি মিলবে বলে আশা নারী শিক্ষার্থীদের।
এফএস/
Discussion about this post