বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে বহু চেষ্টা ও আলোচনা হলেও বাস্তবে একজনকেও প্রত্যাবাসন করা যায়নি। তার ওপর মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে এই প্রত্যাবাসন এখন আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলেই আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। যদিও এই সমস্যা সমাধানে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলায় দ্রুত একটি ‘পজিটিভ আউটকাম’আসবে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এতে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। একইসাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং চীনকে যুক্ত করলে ‘সমাধান সম্ভব’বলেও তিনি মনে করেন। কিন্তু দেশটির অভ্যন্তরীণ সংকট বা জাতিগত সংঘাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রোববার ঢাকায় প্রেসক্লাবে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অব বাংলাদে
শ (ওকাব) এর একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব মতামত উঠে এসেছে। বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সংগঠন ও ক্লাব। অনুষ্ঠানে প্রশ্ন উঠেছে সাত বছর পরও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া আর কতদূর? তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক যে অর্থ সহায়তা পাওয়া যায়, তা কমে আসা নিয়ে সরকারের উদ্যোগই বা কী?
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকটকে অন্য কোনও সংকটের সাথে তুলনা করা যাবে না। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সরকারকে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা ইউএনবি-র সম্পাদক ফরিদ হোসেন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে শুরুতে যেভাবে আলোচনা হত এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মি. হোসেন বলেন, “ দেশে এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় দশ লাখ। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি।”
তবে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ কূটনৈতিক ও আইনি দুই প্রক্রিয়াতেই এগোচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এখনো চলমান। এ বিষয়ে এখনো সমঝোতা প্রক্রিয়া চলছে। গত বছর প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ে।”
“এ সমস্যা সমাধানের জন্য কূটনৈতিক পথটাকেই অনুসরণ করছি। একই সাথে আন্তর্জাতিক আদালতেও গেছি। গাম্বিয়ার মাধ্যমে মামলা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে যতটুকু আউটকাম এসেছে তা আমাদের পক্ষেই এসেছে”,জানান মি. মাহমুদ।
সূত্রঃ বিবিসি
Discussion about this post