স্প্যানিশ এনজিও কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর চেষ্টা করে মারা গেছেন চার হাজার ৮০০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী৷
কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস আটলান্টিকের রুটে নিখোঁজ এবং নিহত অভিবাসীদের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে৷ নিহত ও নিখোঁজ অভিবাসীদের আত্নীয়দের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই সংখ্যাটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি৷ নিহতদের বেশিরভাগ মৌরিতানীয় উপকূল থেকে স্পেনের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন৷
এমন অভিবাসীদের একজন সেনেগালের নাগরিক আবদু আজিজ ফাল৷ যিনি চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি মৌরিতানিয়ার উপকূল থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন৷ তারপর থেকে তার পরিবার তাকে খুঁজছিল বলে জানায় কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস৷
আবদুল আজিজসহ অভিবাসী রুটে নিখোঁজ হওয়া কয়েকশ লোকের ছবি ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে অভিবাসীদের একটি তালিকা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে এই স্প্যানিশ এনজিওটি৷
১২ জুন প্রকাশিত তথ্যে এনজিওটি জানায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে স্পেনের উদ্দেশে সমুদ্রপথে যাত্রা করা পাঁচ হাজার ৫৪ জনের মধ্যে চার হাজার ৮০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে আটলান্টিক মহাসাগরে৷ যা প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি মৃত্যুর পরিসংখ্যান।
এছাড়া, ২০২৩ সালে ছয় হাজার ৮০০ জনেরও বেশি অভিবাসী একই রুটে মারা গেছেন বলে দাবি করেছে কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস।
এনজিওটির প্রতিষ্ঠাতা হেলেনা ম্যালেনো দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, স্পেনের সাথে সীমান্তবর্তী
দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলোতে মানুষের জীবন বাঁচানোর চেয়ে অভিবাসীদের প্রস্থান এড়ানোর দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷
তিনি আরো যোগ করেন, “আমরা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের নামে সমুদ্রে মানুষকে মরতে দিতে পারি না৷’’
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) একই রুটে ২০২৪ সামে ২৪৯ অভিবাসী মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে৷ কামিনান্দো ফ্রন্তেরাসের পরিসংখ্যানের সাথে আইওম-এরবড় পার্থক্য দেখা গেছে৷
অবশ্য সংস্থা দুটি পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে আলাদা পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে৷ কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস সমুদ্রে অভিবাসীদের বা তাদের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং অ্যালার্ম ফোনসহ বিভিন্ন হট লাইন থেকে পাওয়া ফোনের উপর ভিত্তি করে তাদের রিপোর্ট তৈরি করেছে৷
আইওএম ভূমধ্যসাগরীয় সমন্বয় অফিসের মুখপাত্র ফ্ল্যাভিও ডি গিয়াকোমো জানায়, ‘‘উপকূলে আসা নৌকাগুলোর তথ্য এবং নৌকাডুবির ঘটনায় শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আমরা তালিকাভুক্ত করি৷ আমরা এই বিষয়ে বেশ কঠোর৷’’
এছাড়া গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও আমলে নেওয়া হয় বলে জানায় আইওএম৷
তিনি বলেন, ‘‘আটলান্টিক রুটের তুলনায় ভূমধ্যসাগরীয় রুটের পরিসংখ্যানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সহজ৷ কারণ আটলান্টিকে নৌকাগুলোকে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন৷’’
আইওএম-এর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আটলান্টিকের উন্মুক্ত সমুদ্রের এই পথটি খুবই বিপজ্জনক৷ তাই অনেক নৌকাডুবির ঘটনা শোনা না যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে৷’’
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের রুটটি ২০০৫ সাল থেকে সক্রিয় রয়েছে৷ ২০০৭ সালে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের পর রুটটিতে অভিবাসী আগমন কমেছিল৷
২০১৮ সাল থেকে লিবিয়া এবং ভূমধ্যসাগরে সামরিকীকরণ করা হলে আবারো অভিবাসীরা আটলান্টিকের রুটে ফিরতে শুরু করেন৷
স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১৭ হাজারেও বেশি অভিবাসী ক্যানারিতে পৌঁছেছেন৷ গত বছরের একই সময়ে সংখাটি ছিল চার হাজার ৭০০৷
সূত্র: ইনফো মাইগ্রেন
Discussion about this post