বর্তমান আধুনিক বিশ্বে ইলেকট্রনিক্স আমাদের জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে এটি আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। ইলেকট্রনিক্স ছাড়া নিজের জীবনকে যেন কল্পনাই করা যায় না। এতে করে দেখা দেয় একাধিক মানসিক ও স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল ডিটক্স।
কিন্তু এই ডিজিটাল ডিটক্স আসলে কী? এটা আসলে এমন একটা সময়, যে সময়টায় স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার থেকে বিরতি নিতে হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আজকে এর উপকারিতা এবং মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেইঃ-
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি : ডিজিটাল ডিটক্সের প্রাথমিক উপকারিতাই হলো মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি। আর এটি মনোনিবেশ করতেও বেশ সুবিধা দিয়ে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তির কারণে যে সকল বিষয়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ করা যায় তার মধ্যে একটি হলো উৎপাদনশীলতা। কিছুক্ষণের জন্য এর ব্যবহার থেকে বিরতি নিলে মেধা সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে কাজও ভালো হয়।
মানসিক চাপ ও উত্তেজনা হ্রাস : ডিজিটাল ডিভাইস বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি হয়ে থাকে। অবিরত আসতে থাকা নানা তথ্য, নোটিফিকেশন এবং আপডেটেড থাকার চাপ মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডিজিটাল ডিটক্সের ফলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ঘুমের উন্নতি : স্মার্টফোন, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো আমাদের দেহের স্বাভাবিক ঘুমের চক্রকে নষ্ট করে দেয়। এতে অনিদ্রার সমস্যা তৈরি হয়। আর দিন দিন ঘুমের মানও খারাপ হতে থাকে। তাই সন্ধ্যার সময় ডিজিটাল ডিটক্স করলে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মানুষের সঙ্গে মেলামেশা : ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অনেক পরিচিত ,অপরিচিত মানুষের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়ে থাকে। কিন্তু এ সম্পর্কের তেমন একটা ভিত্তি নেই বললেই চলে।এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই একাকিত্ব গ্রাস করতে পারে। তবে এর পরিবর্তে জোর দেওয়া উচিত মুখোমুখি আলাপচারিতার ওপর । তাই পরিবার-বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। কিংবা বাইরে খেলাধুলার ওপর মনোযোগি হতে হবে।
মনোযোগ বৃদ্ধি : ডিজিটাল ডিটক্স যে কোনও বিষয়ের উপর মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। আসলে বারবার নোটিফিকেশন আসলে অন্যমনস্ক হয়ে যান অনেকেই। ডিজিটাল ডিটক্সের ফলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজেই।
সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি : সব সময় ইলেকট্রিক্স ডিভাইজ বা ডিজিটাল মাধ্যম নিয়ে পড়ে থাকলে তা সৃজনশীলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এমনকী এর ফলে উৎপাদনশীলতাও কমতে বাধ্য হবে। ডিজিটাল ডিটক্স করলে মন নানান কিছু ভাবার অবকাশ পাবে। ফলে সৃজনশীলতাও বাড়বে।
ইমিউনিটি বৃদ্ধি : অতিরিক্ত ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে। ঘুমের মানও কমে। ফলে সব মিলিয়ে ইমিউনিটি সিস্টেমও দুর্বল হয়ে যায়। যার জেরে বারবার অসুস্থতা গ্রাস করে আমাদের। তবে এ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় ডিজিটাল ডিটক্স।
ডিজিটাল ডিটক্স সংক্রান্ত টিপস :
১. ডিজিটাল ডিটক্সের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে।
২. বাড়ির মধ্যে বেডরুম কিংবা ডাইনিং হলে একটা টেক-ফ্রি জোন বানিয়ে নিতে হবে। যেখানে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যাবে কিংবা বিশ্রাম করা যাবে।
৩. বাইরে হাঁটতে যাওয়া, প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য সময় বেঁধে নিতে হবে। সঙ্গে এক্সারসাইজও করা যেতে পারে।
৪. বিভিন্ন ডিভাইস রয়েছে, যা স্ক্রিন টাইমের ওপর নজরদারি চালায় এবং তা সীমিত করে দেয়। সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
৫. নিজের ডিজিটাল ডিটক্স সংক্রান্ত লক্ষ্য পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে। যাতে তারাও সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী চলতে পারে।
এস আই/
Discussion about this post