সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোভনীয় চাকুরী, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিং এর বিজ্ঞাপন তো কতোই আসে! যা দেখে আগ্রহী তরুণীরা নিজেদের যোগ্যতা বিবেচনায় রেখে আবেদন করেন। সম্প্রতি রাজধানীতে মিললো এমন এক চক্রের সন্ধান যারা সেই লোভনীয় চাকরি আর মডেলিংয়ের চাকচিক্য দিয়ে কৌশলে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করতো তরুণীদের।
এর আগে বিভিন্ন অযুহাতে ওই তরুণীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হতো আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও । তারপর সে ধারণকৃত ছবি আর ভিডিওকে পুঁজি করে শুরু হতো ব্ল্যাকমেইলিং। উপায় না পেয়ে সেই চক্রের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেন ভুক্তভোগী তরুণীরা। অভিযোগ আছে , কখনো কখনো মডেল হান্টের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন তারা। মূলত এটি ছিলো একটি টোপ। আর সেই ফাঁদে পা দিতেন মডেলিংয়ে উৎসাহী তরুণীরা।
এরপর এই আগ্রহীদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খোলা হতো। নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে সুসম্পর্ক গড়ে, বিদেশী বায়ারদের কাছে পাঠানোর নাম করে একান্তে আবেদনময়ী ছবি হাতিয়ে নিতো এ চক্র। এরপর পাল্টে যেতো এ চক্রের ব্যবহার। বেরিয়ে আসতো নিজেদের প্রকৃত রুপ। ক্রমাগত ছবি আর ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে তরুণীদের বাধ্য করা হতো শরীর অনাবৃত করে সরাসরি ভিডিও কলে যুক্ত হতে। আর সার্ভিস গ্রহণ করতো দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রটির হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার, যারা একটি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে ওই গ্রুপগুলোতে সদস্য হয়েছেন। এখানেও শেষ নয়। এর পরের পর্যায় আরো ভয়ংকর।
চক্রটি এ কর্মকাণ্ডের সবকিছু ভিডিও কলের মাধ্যমে গোপনে ধারণ করে রাখতো। এরপর চক্রটির গ্রাহকদের কাছে ওইসব তরুণীদের জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হতো। এভাবে চক্রটির হাতে দিনের পর দিন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলো শত শত ভূক্তভোগী তরুণী।
এইবার সিআইডির তৎপরতায় মিললো সেই চক্রের সন্ধান। মেডিকেল শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান এবং তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন এই চক্রের মূল হোতা। ৭ বছর ধরে চিকিৎসা বিদ্যার আড়ালে অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে শারীরিক নির্যাতন করে আসছিলেন তারা।
পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি করে আয় করেছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে ৭ বছরে তাদের আয় ১০০ কোটি টাকার বেশি।
দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রকে ধরতে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলো সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। গত মঙ্গলবার বিশেষ অভিযান চালায় দলটি। অবশেষে যশোর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকে এই চক্রের মূল হোতাসহ তার প্রধান সহযোগীদের আটক করতে সক্ষম হন সিআইডি।
সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ চক্রের সদস্যদের নামে বেনামে আলিশান বাড়ি, আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক একাউন্টেও বিপুল পরিমাণ জমানে টাকাসহ ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাদের ব্যবহৃত শত শত কোনো মোবাইল সিমের কোনটিই নিবন্ধিত নয় বলে জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ফাঁদে অনেক তারকা অভিনেত্রীরও সম্পৃক্ততা পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ চক্রের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে বলেও জানান সিআইডির প্রধান।
এ এ/
Discussion about this post