আগামী ডিসেম্বরে শান্তি মিশনে যাওয়ার কথা ছিল নির্জনের। সেখান থেকে এসে বিয়ে করবে বলেও জানিয়েছিল। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর আগেই আমার শ্যালক পরপারে চলে গেল।
কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনাকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের ভগ্নিপতি এনামুল হক।
তিনি আরও বলেন, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই।
ভাই নির্জনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বড় বোন সুচি বেগম। কাঁদছেন হাউমাউ করে। স্মৃতি রোমন্থন করে বলছেন, প্রতিদিন দু-একবার করে ও আমাকে ফোন দিত। কেমন আছি, ও কেমন আছে, এমন কথাই হতো বেশি। দেশ এবং পরিবার নিয়ে ও অনেক পরিকল্পনা করত। ঘটনার দিনও রাত সাড়ে ১০টার দিকে ও আমাকে কল দেয়। এ সময় বলে, আপু, একটা অপারেশনে যাচ্ছি বড় একটা ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে। এরপর বলে, সামনেই তো আমার জন্মদিন, কী দিবা আপু। আমি সেদিন ছুটিতে আসব। কিন্তু সেই দিনটা আর এলো না। তার আগেই সব এলোমেলো হয়ে গেল।
সুচি আরও বলেন, নির্জন আমার মেয়ে সারাকে শান্তি মিশন থেকে এসে একটা আইফোন কিনে দেবে বলেছিল। ভাগ্নিকে আর ফোন কিনে দেওয়া হলো না তার।
একমাত্র ছেলে নির্জনকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা নাজমা আক্তার। বিলাপ করে বলছেন, ও আমার আত্মা ছিল। ও যখন অপারেশনে যায়, বলেছি তুমি দেশের জন্য ও দশের জন্য করিও। যেটি ভালো হয় সেটি দেখেশুনে করিও।
একই অবস্থা বাবা সারোয়ার জাহানেরও। ছেলেকে হারিয়ে তিনি প্রায় বাকরুদ্ধ। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এ রকম মৃত্যু যেন আর কারও না হয়। আর যেন কোনো বাবার এভাবে আর্তনাদ করতে না হয়। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তানজিম সারোয়ারের মরদেহ কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে টাঙ্গাইল হেলিপ্যাডে এসে পৌঁছায়। এরপর মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
পরে আসরের নামাজের পর গ্রামের বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে তানজিমকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার আগে নিহত সেনা সদস্যকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
এম এইচ/
Discussion about this post