কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে চিরবিদায় জানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি যুক্তরাজ্য। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের শেষ প্ল্যান্টটি বন্ধ করে দিয়েছে ব্রিটেন। এর মধ্যে দিয়ে ১৪২ বছরের ইতিহাস ভেঙে নতুন রেকর্ড এখন ইউরোপের এই দেশটি। শিল্প বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে এমন বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়।
সেন্ট্রাল ইংল্যান্ডের র্যাটক্লিফ-অন-সোর স্টেশনটি কয়লাকে শক্তিতে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যরাতে শেষ করতে যাচ্ছে। মালিক ইউনিপার বলেছে, সম্পূর্ণ বন্ধ করার প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণে সবশেষ ১৭০ কর্মী আর দুই বছর সেখানে থাকবে। যুক্তরাজ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উত্স থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন করার যে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে তা বাস্তবায়নে একে একটি মাইলফলক হিসেবে এই বন্ধকে স্বাগত জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
প্ল্যান্টটি বন্ধের মধ্যে দিয়ে ব্রিটেনকে সাতটি প্রধান অর্থনীতির দেশের জোট গ্রুপ-সেভেনভুক্ত প্রথম দেশ হওয়ার অনন্য স্বীকৃতি দিয়েছে। সুইডেন, বেলজিয়ামসহ কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং শিগগিরই এই কৃতিত্ব অর্জন করতে যাচ্ছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল, ১৩৫ বছর পর প্রথম কয়লা ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যুক্তরাজ্য। দেশটির সরকারি গ্রিডের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ঊনবিংশ শতকের পর সেই দিন ছিল এমন এক দিন, যেদিন প্রায় ২৪ ঘণ্টা জাতীয় গ্রিডে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়নি।
এর আগে, দিনে ১৯ ঘণ্টা কয়লাবিহীন বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল যুক্তরাজ্যের। সেটি ছিল গত বছরের মে মাসে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের। ১৮৮২ সালের পর কালই প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটুও কয়লা ব্যবহার করেনি যুক্তরাজ্য। ওই বছর যুক্তরাজ্যে প্রথম সরকারি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘হলবর্ন ভায়াডাক্ট’ চালু হয়।
ন্যাশনাল গ্রিডের কর্মকর্তা করডি ও’হারা বলেন, ‘শিল্প বিপ্লবের পর এই প্রথম একটি দিন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহার করিনি। এই দিনটিকে এনার্জির ব্যবহার পরিবর্তনের একটি সন্ধিক্ষণ বলা যেতে পারে।’
যুক্তরাজ্যে মূলত, সৌর ও বায়ু টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কারখানা ও বাসাবাড়িতে দেওয়া হয়। তবে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির আগে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা এমনিতেই একটু কম থাকে। গ্রিড ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল জাতীয় গ্রিডের অর্ধেক বিদ্যুৎ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে, এক-চতুর্থাংশ আসে পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে। বাকিটা এসেছে জৈব, পানি, বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ থেকে।
কয়েক বছর ধরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। জীবাশ্ম জ্বালানি বিদ্যুৎ উৎপাদনে আর তেমন ভূমিকা রাখছে না দেশটিতে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে দেশটির শেষ গভীর কয়লা খনি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৮০ সাল থেকে দেশটিতে পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়।
সূত্রঃ চ্যানেল ২৪
এ ইউ/
Discussion about this post