আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:
মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন দেশের বিদেশীরা ব্যবসা, শিক্ষা, কাজ এবং মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরিতে বসবাস করেন। তাছাড়াও ব্যাপক সংখ্যক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস আছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদেশিদের বসবাসের ফলে নিজস্ব এলাকা, নিজস্ব ব্যবসা, মসজিদ, স্কুল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে মর্মে স্থানীয় হারিয়ান বেরিতা সংবাদে তুলে ধরা হয়েছে।
স্থানীয় অধিবাসীরা বিদেশিদের সংখ্যাধিক্য এলাকা নিয়ে প্রায়শ: নানান অভিযোগ করে থাকে বলে ইমিগ্রেশনের পরিচালক শামসুল বদরিন মহসিন জানিয়েছেন।
অভিবাসন বিভাগ ক্লাং উপত্যকায় বিদেশীদের আকৃষ্ট করার অন্যতম কারণ হিসাবে চাকরির ক্ষেত্র বিশেষ করে নির্মাণ এবং সেবা সেক্টরে বিদেশি কর্মীদের প্রচুর চাহিদার কথা জানায়।
কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক শামসুল বদরিন মহসিন বলেছেন, রাজধানী শহরে বিদেশী শ্রমের উচ্চ চাহিদা থাকায় নিয়োগকর্তারা এসব বিদেশিদের মধ্য থেকে নিয়োগ করে।
“কুয়ালালামপুরের সমস্যা হল যে লোকেরা প্রচুর সংখ্যক বিদেশীকে দেখে। আমরা প্রায়শই এ সম্পর্কে অভিযোগ পাই, কিন্তু পরিদর্শন করার পরে, আমরা দেখতে পাই যে তাদের বেশিরভাগেরই বৈধতা রয়েছে৷”
“বিদেশী বাসিন্দাদের দেখে স্থানীয়রা ধারণা করে যে তারা অবৈধ অভিবাসী এবং তারা অভিবাসন, পুলিশ এবং কুয়ালালামপুর সিটি অথরিটি এ বিষয়ে কোন কাজ করছে না মর্মে অভিযুক্ত করতে শুরু করে৷ বাস্তবতা হল আমরা যে বিদেশীদের দেখছি তারা সকলেই অবৈধ অভিবাসী নয়। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, সম্প্রতি, আমরা পুডুরায় অভিযান পরিচালনা করে অনেক বিদেশীকে আটক করেছিলাম, কিন্তু আমরা তাদের ছেড়ে দিয়েছি কারণ তাদের বৈধতা এবং কাজের অনুমতি ছিল।
শামসুল বদরিন বলেন, তার বিভাগ রাজধানীতে বিদেশিদের আগমনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের শনাক্ত করতে ক্রমাগত অভিযান পরিচালনা করে। তিনি বলেন,”এই উদ্দেশ্যে, আমরা সবসময় চেক করি এবং অভিযান চালাই, এমনকি অন্যান্য সংস্থা যেমন সিটি অথরিটি এবং পুলিশের সাথে সমন্বিত করে অপারেশন করা হয়। সকল পক্ষ সহযোগিতা করে এবং তথ্য বিনিময় করে৷”
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্লাং উপত্যকা জুড়ে কমপক্ষে ৩০টি স্থানে বিদেশিদের নিজস্ব বসতি এলাকা গড়ে উঠেছে। ক্লাং উপত্যকা, তার দ্রুত উন্নয়ন, শিল্প এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত, ফলে এ এলাকায় অসংখ্য কাজের সুযোগ থাকায় বিদেশিদের নিকট আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে নির্মাণ, সেবা এবং পরিচ্ছন্নতার সেক্টরের।
উল্লেখযোগ্যভাবে বিদেশিদের সংখ্যার বৃদ্ধির ফলে কলোনি গড়ে উঠেছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড অর্থাৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধিপত্য দেখাতে শুরু করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। এই প্রবণতা জনসাধারণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে মর্মে বেরিতা হারিয়ান রিপোর্ট করেছে।
বেরিতা হারিয়ান এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বর্তমানে ক্লাং উপত্যকার বেশ কিছু এলাকা বিভিন্ন বিদেশীদের কলোনিতে পরিণত হয়েছে। তাদের মধ্যে বৃহত্তম সংখ্যক ইন্দোনেশিয়ানরা, ক্লাং উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কুয়ালালামপুর, সুঙ্গাই বুলোহ, আমপাং, সেলেয়াং, শাহ আলম, কাজাং, রাওয়াং, গোমবাক, পুচং এবং ক্লাং এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বাস করে।
বাংলাদেশী সম্প্রদায় লেবুহ আমপাং, বুকিত বিনতাং এবং চেরাস বারুতে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমপাং, গোমবাক এবং সেরি কেমবাঙ্গানে কেন্দ্রীভূত।
রিপোর্ট বলা হয়েছে, বিদেশিদের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মুদি দোকান, খাবারের দোকান, স্কুল এবং নিজস্ব সুবিধা প্রতিষ্ঠা তাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানের প্রমাণ করে।
উদাহরণস্বরূপ, সেলেয়াং, রোহিঙ্গাদের দ্বারা বেশ কিছুদিন ধরে ‘আধিপত্য’ করে আসছে, যখন চীনা এবং কোরিয়ান নাগরিকরা আমপাং, চেরাস এবং কুচাই লামার বেশ কয়েকটি স্থানকে তাদের কেন্দ্র করেছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানিরা চেরাস, পুচং, শাহ আলম, সেরি কেমবাঙ্গান, নিলাই এবং ডেংকিল এলাকায় তাদের বেশিরভাগই নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করে। গত এক দশকে, ভারত, নেপাল, আরব অঞ্চল এবং আফ্রিকা থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাসিন্দাও ক্লাং উপত্যকায় বসতি স্থাপন করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, কর্তৃপক্ষের ক্রমাগত এবং ব্যাপক পদক্ষেপ না থাকায় এই বিদেশিরা নিজেদের সম্প্রদায়কে শক্তিশালী, প্রসারিত করছে এবং এদের কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন যে কর্তৃপক্ষের কার্যকর এবং টেকসই ব্যবস্থা বিদেশীদের আগমনের ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হবে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার বিভিন্নরকম শর্ত আছে । সে সব শর্ত মেনে অবস্থান করলে কোন বিদেশিই মালয়েশিয়ার স্থানীয়দের জন্য সমস্যা হবে না।
এস আর/
Discussion about this post