বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা ও অধিকারের কাজে নিয়োজিত মানবাধিকার কর্মী আল-আমিন নয়নকে মানবপাচারের মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। মানবপাচার দমন ট্রাইবুনাল ঢাকার বিচারক মোঃ রফিকুল ইসলাম গতকাল এই আদেশ দেন।
নয়ন ছাড়াও মামলার বাকি আসামি সৌদি প্রবাসী মো: শফিকুল ইসলাম, ও বেসরকারি সংস্থা শিসউকের নির্বাহী পরিচালক সাকিউল মিল্লাত মোর্শেদকে মামলা থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে পুলিশ আল-আমিন নয়নকে জানায়—তার বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এরপর ওইদিন বিকালেই তাকে নিম্ন আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৬ জুন ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে নয়নের বিরুদ্ধে একটি পিটিশন মামলা হয়েছে। কিন্তু নয়ন এর আগে কোন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাননি।
আল-আমিন ২০১৭ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রায় এক দশক আগের ২০১৩ সালের একটি ঘটনায়। নয়ন তখন শিসউক নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানটি তখন মানবপাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দিতো। ২০১৩ সালে ইরাক থেকে ফেরত আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলা দায়ের করতে প্ররোচণা দিয়েছিলেন এমন অভিযোগে ২০২৩ সালের ২৬ জুন নয়নের বিরুদ্ধে আদালতে পিটিশন মামলা হয়।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর এই মামলা থেকে জামিনে মুক্ত হন নয়ন। এরপর গত আটমাসে একাধিক শুনানি হয়। সর্বেশষ গত ১৪ অক্টোবর চার্জ গঠনের শুনানি শেষে আদালত সব আসামিকে অব্যাহতির আদেশ দিলেন।
মামলা থেকে অব্যাহতির খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, বাংলাদেশে মানবপাচারবিরোধী লড়াইয়ে যে কয়জন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আল আমিন নয়ন তাদের অন্যতম। এমন একজন মানুষকে দশ বছর আগের একটা ঘটনায় যেভাবে মামলা দায়ের ও হয়রানি করা হয়েছে সেটি ভীষণ দুঃখজনক। কেন কার প্ররোচণায় এমন মামলা হলো সেটি রাষ্ট্রের তদন্ত করা উচিত।
নয়নের বিরুদ্ধে এমন মামলা দায়েরর ঘটনায় অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ২০টি সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) গত বছর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, নয়নকে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ১৫ (১) ধারায় আসামি করা হয়েছে। কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করলে বা মিথ্যা মামলা দায়েরে বাধ্য করলে— এই ধারায় আসামি করা যায়।নয়নের বিরুদ্ধে এই ধারার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ মিথ্যা মামলার অভিযোগে নতুন করে মামলা করতে গেলে সাধারণত আগের মামলার বাদীকে আসামি করা হয়। সাক্ষীকেও আসামি হিসেবে আদালত গ্রহণ করে না। অথচ নয়ন এ মামলায় বাদী বা সাক্ষী কিছুই ছিলেন না। কিন্তু প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে এবং মানবপাচার ট্রাইব্যুনালসহ আদালত যখন অবকাশে, সেই সময় তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে।
মানবপাচার বিরোধী লড়াইয়ে অবদান রাখায় এ বছর তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিআইপি হিরো পুরুষ্কার পান। এর আগে সততা ও নিষ্ঠার জন্য ২০২৩ সালে ব্র্যাকের স্যার ফজলে হাসান আবেদ মূল্যবোধ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০২০ সালে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপি তাকে ‘পরিবর্তনের রূপকার’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
এম এইচ/
Discussion about this post