যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরও খাদ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন ১৩ গ্রেডের ৬৯ জন কর্মচারীকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে ‘চলতি দায়িত্ব’ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। নীতিমালা লঙ্ঘন করে তাঁদের ‘চলতি দায়িত্ব’ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ খাদ্য পরিদর্শকদের। এ নিয়ে খাদ্য বিভাগে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এ নিয়ে সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন সারা দেশ থেকে আসা খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সদস্যরা।
তাঁদের অভিযোগ, এই পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সদ্যোবিদায়ি খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আসামি করে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি নতুন যোগ দিয়েছি খাদ্য অধিদপ্তরের ডিজি হিসেবে। বিষয়টি শুনেছি, আদালতে মামলাও হয়েছে।
যেহেতু মামলা হয়েছে, সুতরাং আমরা আইনিভাবেই মোকাবেলা করব।’
জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে প্রায় দেড় হাজারের মতো কর্মকর্তা আছেন। যাঁদের বেশির ভাগই এখন নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। তাঁরাই মূলত খাদ্য বিভাগের চালিকাশক্তি বলে পরিচিত।
তাঁরাই মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ধান, চাল ও গম সংগ্রহ করে সরকারি খাদ্যগুদামে সংরক্ষণ করেন। শুরু থেকেই এই পদায়নের বিরোধিতা করে আসছেন খাদ্য পরিদর্শকরা। তাঁরা বলছেন, প্রথমত এই পদায়নে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রধান সহকারী, হিসাবরক্ষক, সুপারিনটেনডেন্টের মতো পদের কর্মচারীদের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি-ফুড) হিসেবে চলতি দায়িত্ব দিয়ে পদায়ন করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব পদের কর্মচারীকে এসব পদের দায়িত্বে দিতে হলে তাঁদের চাকরির মেয়াদ হতে হবে অন্তত ১১ বছর।
কিন্তু যাঁদের পদায়ন করা হয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে এই শর্ত পূরণ করা হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত বছর (২০২৩) ১৮ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপনে চলতি দায়িত্ব প্রদানের বিধি-বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এর ধারা ৮-এর (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, যাঁকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হবে তাঁর ওপরের পদধারী কোনো কর্মচারীকে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর অধীন করা যাবে না। একই সঙ্গে ধারা ৫-এর উপধারা (গ)-এ বলা হয়েছে, পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতাসংক্রান্ত গ্রেডেশন তালিকা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। পরিদর্শকরা বলছেন, এই বিধির কোনো ধারাই এখানে মানা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৬৯ জনকে পদায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তখন থেকেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এরা যোগ্য হলে পদায়ন করলে আমাদের কোনো অভিযোগ থাকত না। যোগ্য কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে কেন এভাবে পদায়ন করা হলো সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। অবিলম্বে এ প্রজ্ঞাপন বাতিল করে যোগ্যদের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে রাজশাহী ও চট্টগ্রামের আদালতে তিনটি মামলা করেছেন খাদ্য পরিদর্শকরা। চট্টগ্রামের একটি আদালতে খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর খাদ্য পরিদর্শক মো. নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের জেলা দায়রা জজের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন। প্রতিটি বদলি সুপারিশের জন্য কয়েক লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ
এম এইচ/
Discussion about this post