দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় ছিল বিএনপি, ছাত্ররা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা। যার মাস্টারমাইন্ড ছিলো বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখন আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ঘোলাটে করার জন্য একটা প্রগতিশীল চক্র চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার ইঙ্গিত বহন করে বঙ্গ ভবনে সামনে মিছিল। নতুন করে আরেকটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা চক্রান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ১২ দলীয় জোটসহ সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ এলডিপির প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় বাংলাদেশ এলডিপির ৫ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে চেয়ারম্যান হয়েছে শাহাদাত হোসেন সেলিম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, অতিরিক্ত মহাসচিব এম এ বাসার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মহিনউদ্দীন আহাম্মদ। দলটির পূর্বের চেয়ারম্যান আবদুল করিম আব্বাসী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় তার অনুমতিক্রমে বাংলাদেশ এলডিপির কমিটি ঘোষণা করেন শাহাদাত হোসেন সেলিম। আবদুল করিম আব্বাসীকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন করেছে। চৌধুরী আলম-ইলিয়াস আলীসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম, খুন করেছে, আয়নাঘর তৈরি করেছে। হারুন- বিপ্লবদের মতো লোক তৈরি করে বহু মায়ের বুক খালি করেছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্র করে সংবিধান পরিবর্তন যদি না হতো তাহলে সংদলীয় রাজনীতির মাধ্যমে এই দেশ পরিচালিত হতো। কিন্তু সেই সংসদীয় রাজনীতিকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা।
ফারুক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে, এখনো তারেক রহমানের রাজনৈতিক মামলা প্রতাহ্যার হলো না। মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে আছেন এখনো শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়নি। কোন মন্ত্রণালয় কত হাজার কোটি টাকা লুট করেছে তাও প্রকাশ করা হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। এটা টিকিয়ে রাখতে হলে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে নির্বাচনের তারিখ অবিলম্বে আপনি ঘোষণা করেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। যারা রাজনীতি করে তারাই দেশ পরিচালনা করবে। আমরা আশা করবো- অবিলম্বে শেখ হাসিনার জঞ্জাল মুক্ত করবেন।
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে যখন যুগপৎ আন্দোলন ঘোষণা করা হয় তখন ১২ দলীয় জোট প্রতিটা মুহূর্তে রাজপথে ছিলাম। ৭ জানুয়ারির পর মানুষ হতাশায় থাকলেও আমার আন্দোলন জোরালো করতে সারাদেশ কর্মসূচি পালন করেছি। ভারতের কারণে শেখ হাসিনা টিকে ছিলো। এজন্য আমরা ভারত বিরোধী কর্মসূচি দিয়েছি। ভারতীয় পণ্য বর্জণের জন্য সারা দেশ গিয়েছি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় পণ্য হচ্ছে শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর আমরা রক্তাক্ত আন্দোলন করেছি। ছাত্র,জনতা, শ্রমিক- কৃষক, গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়েছে। সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা অত্যন্ত সাদরে গ্রহণ করেছি। তিনি যাদেরকে উপদেষ্টা করেছে, তারা আন্দোলনের সময় বিদেশে ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের পর শপথ নিয়েছেন। তারা এখনো বুঝতে পারছেন না যে কি করবেন।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ও আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান বলেন, নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করে আজকে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন তারা ক্ষমতায় যাবেন। সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তাবে রূপান্তরিত হতে দিবো না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন এই সংস্কার চলবে। আপনারা সংস্কারের নামে বেশি সময় নিবেন না। আমরা চাই দ্রুত সময় একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন। অন্যত্থায় আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।
এ ইউ/
Discussion about this post