ডিসেম্বরের প্রথম ৩ সপ্তাহে ব্যাংকগুলো ১.৫৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা গত বছরের ডিসেম্বরের একই সময়ে ছিল ১.২৯ বিলিয়ন ডলার। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ২২%। ডলার সংগ্রহের নির্ধারিত দামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুটা নমনীয়তার কারণে এমন হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে ব্যাংকগুলো ১.৫৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা গত বছরের ডিসেম্বরের একই সময়ে ছিল ১.২৯ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ রেমিট্যান্স প্রবাহ দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তারা রেমিট্যান্স প্রবাহে এই বৃদ্ধির পেছনে অনুকূল বিনিময় হারের কথা — যা প্রতি ডলারে ১২২ টাকা পর্যন্ত — উল্লেখ করছেন।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকগুলো বছরের শেষের দিকে ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে।’
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, অ্যাসোসিয়েশন অভ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশ (বাফেদা)-এর বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলো ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দেবে। এর বাইরে ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে। সে হিসেবে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলারেে দাম সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ২৪ পয়সা পর্যন্ত দিতে পারে।
তবে ব্যাংক এমডিদের (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) সংগঠনদুটোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া ডলারের এই দাম অনেক ব্যাংকই মানছে না। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বেশ কয়েকটি ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝতে পেরেছে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম নিয়ে ব্যাংকগুলোকে খুব বেশি চাপ দিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়।
গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেশি অফার করায় ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ওই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। অর্থাৎ, স্বাভাবিক সময় থেকে ওই মাসে প্রায় ৬০০–৭০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স কম এসেছিল।
ওই ঘটনার পর থেকে ব্যাংকগুলোকে নানা সময়ে সতর্ক করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা নমনীয় আচরণ করছে।
তবে ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংকের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক অস্বাভাবিক নমনীয় আচরণ করছে। এসব ব্যাংকগুলো ডলারের রেট নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অনিয়ম করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক চুপ থাকছে বলে উল্লেখ করেন ওই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বেশকিছু ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেশি দেওয়ার কারণে ডলারও বেশি পাচ্ছে। আবার অনেক ব্যাংক বাফেদা নির্ধারিত দাম মেনে চলায় তাদের রেমিট্যান্স আয় কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো থাকলেও চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯.৬৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময় শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
এ জেড কে/
Discussion about this post