কারামুক্ত হয়ে সন্তানদের বুকে জড়িয়ে নিলেন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সেই দিনমজুর জামাল মিয়া। মা হারা সন্তানদের আর্তনাদে কেঁপেছে রাষ্ট্র, বিচারবিভাগ। আর মাসুম বাচ্চাদের আর্তনাদে খুলেছে জেলের তালা!
এদিকে এক সপ্তাহ পর বাবাকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা জামাল মিয়ার বড় ছেলে সাজ্জাদ ও মেয়ে ফারিয়া।১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরের গোপালগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফিরোজ মামুন জামাল মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। এদিন বিকালে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি।দিনমজুর জামাল মিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করেন গোপালগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইড আইনজীবী অ্যাডভোকেট শারমিন জাহান।
এদিকে আদালতের নির্দেশনা মত জামাল মিয়ার চার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিকালে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আক্তার ছুটে যান জামাল মিয়ার বাড়িতে। পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন বিভিন্ন উপকরণ। এ ছাড়া জামাল মিয়ার সন্তানদের লেখাপড়ায় দায়িত্ব নেন তিনি।
জানা গেছে, ১২ অক্টোবর জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম যমজ সন্তান জন্মের পর মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ৪ সন্তান ও বৃদ্ধ মাকে দেখাশোনা করতেন তিনি। তবে গেল ৯ নভেম্বর গোপালগঞ্জে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শওকত আলী দিদার হত্যা হত্যা মামলায় দিনমজুর জামাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে মা হারা ছোট তিন বোনকে নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে ১৩ বছরের সাজ্জাদ। অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটানোর পাশাপাশি পড়ালেখাও বন্ধ হতে চলেছে সাজ্জাদ ও তার বোনের।
এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদ আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। এমন সংবাদ নজরে আনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে সেই শিশুদের দেখভালে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সমাজসেবা কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের কাছে বিষয়টি জানতে চান এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই শিশুদের খাবার-দাবার ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আদেশ দেন।অ্যাডভোকেট শারমিন জাহান বলেন, আমরা মানবিক বিষয়গুলো আদালতের সামনে তুলে ধরি। পরে আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ফিরোজ মামুন মানবিক কারণে আসামি জামাল মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে সন্ধ্যায় জামাল মিয়া জেল থেকে মুক্তি পান।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনুর আক্তার জানান, জামাল মিয়ার পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং শিশুদের পোশাক দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় খাদ্য ও শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে। খোজঁখবর রাখা হচ্ছে শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত।প্রসঙ্গত, এক মাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথি বেগম একসঙ্গে দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এর সাত দিন পর তার মৃত্যু হয়। এরপর চার সন্তানের লালনপালন করছিলেন জামাল মিয়া। তার বড় ছেলে সাজ্জাদ এম এম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ৯ নভেম্বর রা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দিদার হত্যা মামলায় জামালকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় কোটালীপাড়া পুলিশ। পরে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয় জামালকে।
এস এম/
Discussion about this post