কক্সবাজার টেকনাফে বনবিভাগের কাজ করতে গিয়ে ১৯ জন অপহরণের শিকার ১৯ হয়েছে। এরই মধ্যে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীদের পরিবার।
তাৎক্ষণিকভাবে অপহৃত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে ১৭ জনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে।
তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম (২২), মো সৈয়দ (৫০), মো রফিক (৩৫),আইয়ুব খান (১৮), আইয়ুব আলী (৫০), আনসার উল্লাহ (১৮), আয়াত উল্লাহ (২২), মো সামছুল আলম (৪৫), মো. ইসলাম (২১), সামছুল ইসলাম (৪০), মো. ইসমাইল (৩৫), মোহাম্মদ হাসিম (৪০), নূর মোহাম্মদ (২১), সৈয়দ আমিন (৩০), সফি উল্ল্যাহ (৩০), মো. আইয়ুব (৫০), মোহাম্মদ আমিন (১৮)।
তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দাবি করা মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারলে তাদের লাশ বাড়িতে পাঠাবে বলেও হুমকি দেয় অপহরণকারীরা।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলা হ্নীলার ইউনিয়নের জাদিমোরা পাহাড় থেকে তাদের অপহরণ করা হয়।
এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন।
এহসান উদ্দিন বলেন, সোমবার সকালের দিকে টেকনাফের হ্নীলার জাদিমোরা পাহাড়ে বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করতে গেলে বন বিভাগের কাজে নিয়োজিত ১৯ জন শ্রমিককে ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়। তাদের অপহরণ করে গহিন পাহাড়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা।
বন বিভাগ ও পুলিশসহ স্থানীয়রা তাদের উদ্ধারের জন্য পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে।
বনবিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, “বনবিভাগের পরিচ্ছন্নতা কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা অপহরণের শিকার হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব ও বনবিভাগে কর্মীসহ স্থানীয় জনগণ পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
অপহৃত সাইফুল ইসলামের বাবা জুহুর আলম বলেন, তার ছেলের মোবাইল ফোন থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। প্রত্যেকের জন্য এক লাখ টাকা করে মোট ১৯ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে।
তাদের দাবি করা টাকা আমার নেই বললেই তারা ছেলেকে মারধর ও নির্যাতন করে ছেলের মাকে ফোন দিচ্ছে। র্যাব-পুলিশ নিয়ে ঝামেলা করলে তাদের মেরে লাশ করে পাঠানো হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জুহুর আলম।
একই কথা জানান অপহরণের শিকার আনসার উল্লাহ ও আয়াত উল্লাহর মা খতিজা বেগম।
হ্নীলা ইউপির ৯ নম্বর ওযার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, “পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এরপর মুক্তিপণ আদায় করে ধরে নিয়ে যাওয়া লোকজনকে ছেড়ে দেয়। সন্ত্রাসীদের দাবি করা টাকা না পেলে অপহৃতদের নানান ধরনের নির্যাতন করা হয়। এলাকার লোকজন অপহরণের আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।”
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, “অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।”
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫১ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৯১ জন স্থানীয় ও ৫৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার জানিয়েছে।
এ ইউ/
Discussion about this post