৪৬০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ চলার পর গাজায় যুদ্ধবিরতির এবং জিম্মি মুক্তির নতুন চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। আগামীকাল রবিবার থেকে এই চুক্তি কার্যকর করা হবে। স্থানীয় সময় শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোরে এক বিবৃতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকের পর শনিবার সকালে ইসরায়েলি সরকার এই চুক্তি অনুমোদন করে। দেশটির সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জিম্মিদের মুক্তির কাঠামো অনুমোদিত হয়েছে। এই কাঠামো রবিবার কার্যকর হবে। এই চুক্তি যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।’
ইসরায়েলের কিছু কট্টরপন্থী মন্ত্রীর তীব্র বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও নেতানিয়াহুর কোয়ালিশন সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী চুক্তির পক্ষে এবং ৮ জন এর বিপক্ষে ভোট দেন। এর আগে শুক্রবার, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভাও চুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছিল।
চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি শুরু হবে ছয় সপ্তাহের প্রাথমিকপর্যায় দিয়ে গাজায় আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েলের জেলে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এই পর্যায়টি ১৫ মাসের পুরনো যুদ্ধের অবসানের পথ প্রশস্ত করবে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাবে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাবে এবং প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক অঞ্চলটিতে প্রবেশ করতে পারবে।
মন্ত্রিসভা চুক্তি অনুমোদনের পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ প্রথম পর্যায়ে মুক্তি দেওয়ার জন্য ৭৩৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর একটি হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করে। এই মুক্তি রবিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার আগে কার্যকর হবে না।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, বাকি জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং স্থিতিশীল শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। তৃতীয় ও শেষ ধাপে, গাজার পুনর্গঠন এবং যদি কোনো জিম্মির দেহাবশেষ থেকে থাকে, তা ফেরত দেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কাতার জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের মধ্যে নারী, মহিলা সৈনিক, শিশু, বৃদ্ধ এবং আহত ও অসুস্থ বেসামরিক লোকজন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে তিনজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং পরবর্তী ছয় সপ্তাহে ছোট ছোট গ্রুপে আরও জিম্মি মুক্তি দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার পর ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার জন্য অভিযান শুরু করে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসলায়ের হামলায় গাজায় ৪৬,৮৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন আহত হয়েছেন। ২৩ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মধ্যস্থতাকারী ব্রেট ম্যাকগার্ক জানান, হোয়াইট হাউস আশা করছে যুদ্ধবিরতি রবিবার সকালে শুরু হবে এবং বিকেলের মধ্যে রেড ক্রসের মাধ্যমে তিনজন নারী জিম্মি ইসরায়েলে মুক্তি পাবে। কগার্ক বলেন, ‘আমরা এই চুক্তির প্রতিটি বিস্তারিত বিষয় নিশ্চিত করেছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এটি রবিবার কার্যকর হবে।’
সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা।
এম এইচ
Discussion about this post