একের পর এক বেরিয়ে আসছে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। এবার আরও ভয়াবহ অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। মাত্র ৫টি চেয়ার মেরামতে খরচ তোলা হয়েছে ৬২ হাজার ২ শ টাকা। কয়েকটি টেবিল, বেঞ্চ ও খাট মেরামতে কাগজে-কলমে খরচ দেখানো হয়েছে আরও ৫৮ হাজার ১১৯ টাকা। মাত্র কয়েকটি আসবাবপত্র মেরামত বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৯ টাকা খরচের অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি জানাজানির পর সকলের চক্ষু চড়কগাছ!
একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। নার্সিং ইনস্টিটিউটের সকল আর্থিক লেনদেন হওয়ার কথা সরকারি ব্যাংকে খোলা প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি হিসাবে। অথচ সব লেনদেন হয় ইন্সট্রাক্টরের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসেবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের টাকাও লেনদেন হয় ওই ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় সরকারি নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, আর্থিক অনিয়ম, -ভুয়া বিল-ভাউচার ও ক্রয়-মেরামত ব্যয় বাবদ ভূতুড়ে বিল উত্তোলনের অনিয়ম খুঁজে বের করেন তারা। পরে সেখানে হাজির হন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুত কুমার রায়।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ সেশনে ভর্তি হওয়া ৭৫ জন শিক্ষার্থীদের কাছ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে জনপ্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ২-৪ হাজার টাকা আদায় করে নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গত দুই বছর ধরে কোনো কমিটির একটি সভার রেজ্যুলেশন হয়নি।
নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ ফরিদা ইয়াছমিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম এবং সরকারি নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করার অভিযোগ বেশ পুরোনো। এসব নিয়ে চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় দৈনিকে ধারাবাহিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ১৩ জানুয়ারি ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যদিও সেই প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরা হলেও একপ্রকার দায়সারা ও অস্পষ্টতা প্রকাশ পায়।
এ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে যান জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এতে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম। আরও অংশ শুনেন মুখ্য সংগঠক সজিবুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্যসচিব রেজাউল বাসার প্লাবন, ফাহিম উদ্দিন মভিনসহ অন্যরা। এসময় চাঞ্চল্যকর আরও অনিয়মের তথ্য খুঁজে পান তারা।
তবে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ফরিদা ইয়াছমিন। মেরামত ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন চেয়ার কেনার বরাদ্দ না থাকায় মেরামত খরচ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ কয়েকটি নতুন চেয়ার ক্রয় করা হয়েছে। একইসাথে আসবাবপত্র ক্রয় করে মেরামত হিসেবে খরচ দেখানো হয়েছে। এটি ঢাকা অফিসের সাথে আলোচনা করেই করা হয়েছে।
অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ব্যাপারে ইন্সট্রাক্টর ফরিদা ইয়াছমিনের যুক্তি, প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা যাতে ভালোভাবে চলতে পারে, সে জন্য সবার মতামতের ভিত্তিতে সভায় রেজ্যুলেশন করে কিছু বাড়তি অর্থ নেয়া হয়েছে। শুধু আমরাই না, অন্যান্য নার্সিং ইনস্টিটিউট আরও বেশি নেয়। হয়ত এটা নেয়া ঠিক হয়নি।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুত কুমার রায় বলেন, ‘এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অডিট হতে পারে। আমরাও পরামর্শ দিব যে, অডিটের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা যাচাই করার। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরও তদন্ত হতে পারে। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’
এ ইউ/
Discussion about this post