যুগে যুগে বাস্তব জীবনের ঘটনা থেকেই গল্প, নাটক, সিনেমা তৈরি হয়ে আসছে। তেমনি এমন এক অনন্য গল্পের সিনেমা ‘টুয়েলভথ ফেল’। যে সিনেমা কৃত্রিমতা ও করপোরেট মোড়ক থেকে বেরিয়ে দর্শকদের কাঁদিয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। এরপরে ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ডিজনি প্লাস হটস্টারে।
অল্প বাজেটের এই সিনেমাটি মুক্তির পরে তেমন আলোচনায় না আসলেও এর কিছু দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়। এর পরেই সিনেপ্রেমীদের শুরু হয় ‘টুয়েলভথ ফেল’ বন্দনা। জীবনের গল্পটি নাড়া দেয় সিনেপ্রেমীদের।
‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত ম্যাসি। সিনেমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমবার যখন আমি স্ক্রিপ্ট পড়ি, আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। আমি এই গল্পে নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।’
ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ শর্মা ও আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশি দম্পতির জীবনের গল্প নিয়ে ২০১৯ সালে ‘টুয়েলভথ ফেল’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন দেশটির ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠক। সেই উপন্যাস অবলম্বনে ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা নির্মাণ করেন বিধু বিনোদ চোপড়া।
বাস্তব জীবনে আর্থিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যাকে সঙ্গী করে বেড়ে ওঠেন মনোজ। পরিবারকে সহযোগিতা করতে পড়াশোনার পাশাপাশি অটোরিকশাও চালাতেন তিনি। মাধ্যমিকে কোনোরকম পাস করলেও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রথমবার হিন্দি ছাড়া বাকি সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন তিনি। পরেরবার অনেক কষ্টে দ্বাদশ পাস করেন।
এর মধ্যেই একবার এক পুলিশ মনোজের অটোরিকশাটি আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরে থানায় গিয়ে অটোটি ছাড়িয়ে আনতে যান তিনি। সেখানে একটি সাক্ষাৎ বদলে দেয় তার জীবনের প্রথম গতিপথ। কীভাবে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেয়া যায়, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় সবকিছু ওই আলোচনায় উঠে আসে। এরপর মনজ স্বপ্ন বুনেন আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার। ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন চেপে বসে মধ্য প্রদেশের এই দ্বাদশ ফেল ছেলেটির মাথায়।
পরে সেখান থেকে শত প্রতিকূলতা পার করে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে মধ্য প্রদেশ থেকে দিল্লিতে পৌঁছান মনোজ। এই লড়াইয়ের যাত্রায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ছেলেটির জীবনে আসে উত্তরাখন্ডের মেয়ে শ্রদ্ধা জোশি। তার সব সময়ের সঙ্গী ছিলেন প্রেমিকা শ্রদ্ধা। তিনিও চাকরির পরীক্ষা দিতে দিল্লি যান। প্রথমবারেই আইআরএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান শ্রদ্ধা।
তবে তিনবার চেষ্টা করেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি মনোজ। শ্রদ্ধার অনুপ্রেরণায় চারবারের চেষ্টায় আইপিএস এর চাকরিটা পেয়ে যান তিনি। ২০০৫ সালে মনোজ শর্মাকে বিয়ে করেন বিয়ে করেন শ্রদ্ধা। বর্তমানে এই দম্পতির ঘরে চিয়া ও মানস নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
জানা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দেওয়া সিনেমাটি এরইমধ্যে ৬০ কোটির বেশি রুপি ব্যবসা করেছে। ছবিটি নির্মাণের ব্যয় হয় মাত্র ২০ কোটি রুপি। এ সিনেমায় মনোজ চরিত্রে বিক্রান্ত ম্যাসি ও শ্রদ্ধা চরিত্রে অভিনেত্রী মেধা শংকর অভিনয় করেন।
ইন্টারন্যাশনাল মুভি ডাটাবেজে (আইএমডিবি) সিনেমাটির রেটিং ১০-এর মধ্যে ৯.২। মুক্তির এতোদিন পেরিয়ে গেলেও হইচই থামছে না সিনেমাটি নিয়ে।
‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমাটি অদম্য ইচ্ছাশক্তির উদাহরণ। মানুষ চাইলেই যেকোনো বাঁধা অতিক্রম করতে পারে। আর এ কারণে সিনেমাটি ভারত ও বাংলাদেশে তরুণদের কাছে কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
এফএস/
Discussion about this post