সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা ও দুই বোন হারিয়েছেন তিন দিন আগে। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন তাসনিয়া ইসলাম প্রেমাও (১৮)। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। প্রেমাকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টাও করেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা হেরে গেলেন মৃত্যুর কাছে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না। গতকাল শুক্রবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাসনিয়া। এ নিয়ে এই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১১।
গত বুধবার চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন প্রেমা। এদিকে একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শিশু আরাধ্য বিশ্বাসকে (৮) উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে গতকাল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাধ্যকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন স্বজনরা। আরাধ্য চমেক হাসপাতালের শিশু আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল।
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার পর থেকেই তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা সংজ্ঞাহীন ছিলেন। ভর্তির পর থেকেই তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল। চমেকের আইসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুপুর ১২টায় তাসনিয়াকে মৃত ঘোষণা করা হয়। শুরু থেকেই তার অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। সময়ের সঙ্গে অবস্থার অবনতি হয়।’
স্বজনরা জানান, ঈদের ছুটিতে রফিকুল-লুৎফুন দম্পতি তাদের তিন সন্তান, আত্মীয় ও রফিকুলের সহকর্মী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিলীপ বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যরা পর্যটন শহর কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে গত বুধবার তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তাসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আহত আরাধ্যকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে।’ বর্তমানে চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুর্জয় কুমার মন্ডল (১৮)। তিনি শিশু আরাধ্যের স্বজন।
গত বুধবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। এ দুর্ঘটনায় সেদিনই ১০ জন নিহত হন। তারা হলেন তাসনিয়ার বাবা ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম (৪৮), মা লুৎফুন নাহার (৩৭), দুই বোন আনিশা আক্তার (১৪), লিয়ানা (৮) ও স্বজন তানিফা ইয়াসমিন (১৬)।
এ ছাড়া নিহত হন আরাধ্যর বাবা দিলীপ বিশ্বাস ও মা সাধনা মন্ড-ল। নিহত অন্য তিনজন হলেন ইউছুপ আলী (৫৭), আশীষ মন্ডল (৫০) ও মোক্তার আহমেদ (৫২)। ইউছুপ গাড়িচালক ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ ইউ/
Discussion about this post