ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের হেফাজতে এক মুসলিম কৃষকের মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ২৪ বছর বয়সী কৃষক জাহানুর হককে জামা খুলে ধর্ম নিশ্চিত করে তাকে নির্মমভাবে মারধর করার পর হত্যা করেছে বিএসএফ। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে গত ৩ এপ্রিল ভোরাম পয়াস্তি গ্রামের কাছে সীমান্ত পিলার নম্বর ৯২৯-এর আশপাশে। স্থানীয়দের দাবি, বিএসএফ তাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। মাক্তুব মিডিয়ার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জাহানুর হকের পরিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জাহানুর হক যখন মাঠে পানি দিতে যাচ্ছিলেন, তখন বিএসএফ সদস্যরা তাকে আটকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিএসএফ সদস্যরা প্রথমে জাহানুরকে জোরপূর্বক জামা খুলতে বাধ্য করে। তার ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে অমানবিকভাবে মারধর করা হয় বলে জানায় তারা।
অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার বলবন্ত প্রথমে জাহানুরকে মাটিতে ফেলে তার বুকে দাঁড়িয়ে গুলি করেন, যা তার তলপেটে লাগে। এরপর বিএসএফ সদস্য তার মাথায় আরেকটি গুলি চালান।
আহত অবস্থায় জাহানুরের মরদেহ প্রায় ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত খোলা জায়গায় পড়ে ছিল। এসময় বিএসএফ সদস্যরা স্থানীয় গ্রামবাসী ও পরিবারকে তার কাছে যেতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুপুর নাগাদ স্থানীয় দিঘাটা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে দিঘাটা সাব-ডিভিশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। জাহানুরের মরদেহ কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজে পাঠানো হলেও চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে ময়নাতদন্ত একদিন পিছিয়ে যায়। অটোপসিতে মাথার খুলির অংশ পরীক্ষা না করায় প্রক্রিয়াগত গাফিলতিরও অভিযোগ উঠেছে।
কোচবিহারে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জাহানুর হকের মৃত্যু ঘিরে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
নিহত জাহানুর হককে বিএসএফ ‘চোরাকারবারি’ বলে অভিযুক্ত করলেও, এখনও পর্যন্ত কোনও তদন্ত শুরু হয়নি। নিহতের মা রিনা বিবি অভিযোগ করেন, ঘটনার পরপরই লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েও প্রশাসন থেকে কোনও আইনি সহায়তা পাওয়া যায়নি। যদিও, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। তবে, অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি বা সাময়িক বরখাস্ত, গৃহীত হয়নি।
সূত্রঃ বাংলাভিশন
এম এইচ/
Discussion about this post