‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন–২০২৫’–এ যোগ দিতে আজ কাতার যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। চার দিনের এই সফরে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল–থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে ব্যবসা ও জ্বালানি সহযোগিতার পাশাপাশি ভিসা উন্মুক্ত করা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।
দোহা থেকে কূটনৈতিক একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, ২৩ বা ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ও কাতারের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের প্রস্ততি চলছে।
প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে কারা সঙ্গী হচ্ছেন তা নিয়ে উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা এ সফরে যাচ্ছেন। যেখানে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এছাড়াও দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন। এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন-ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।
এদিকে আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫ এর আর্থনার ওয়েবসাইটে দেওয়া অনুযায়ী, দোহায় ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এবারের আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’। কাতার ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আর্থনা সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল ফিউচার এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক। দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনে কাতারের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও অনন্য প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে। শীর্ষ সম্মেলন আলোচনার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করবে, যেখানে প্রথাগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবনের সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচন এবং এক সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনের উপায়গুলো উঠে আসবে। এই শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করবেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সফরে আগামী ২৩ বা ২৪ এপ্রিল কাতারের আমিরের সঙ্গে দোহায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে গত বছরের এপ্রিলে কাতারের আমিরের ঢাকা সফরের সময় নেওয়া সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, জ্বালানি, বিশেষত এলএনজি রপ্তানি, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা চালু করা এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবে বাংলাদেশ।
২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পর দুই দেশ পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল। ওই চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়বস্তুগুলো ছিল ব্যবসা, বাণিজ্য, সংযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ওই সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হলে কাতারের আমির সংযুক্তি, পর্যটনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের অন্যতম উৎস কাতার। কাতার এখন যে এলএনজি বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করে, সেগুলো জাহাজে করে বন্দরে বহির্নোঙরে এনে সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এলএনজি সরবরাহের জন্য তাদের টার্মিনাল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সমুদ্রবন্দর অবকাঠামো কাজে লাগিয়ে কাতার এলএনজি সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কাতার থেকে প্রতিবছর ১৫ লাখ মেট্রিক টন এলএনজি আমদানির জন্য ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোবাংলা ও কাতার গ্যাসের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে নতুন এ চুক্তি কার্যকর হবে।
এ ব্যাপারে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাতারের আমিরের বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। পরিকল্পিত ওই বৈঠকে ২০২৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কাতার থেকে এলএনজি সরবরাহের যে সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হতে পারে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য পর্যটনসহ নানা খাতে ভিসা চালু করা এবং ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার বিষয়গুলো আসতে পারে।
এম এইচ/
Discussion about this post