দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপ করে থাকি। এ সময় অনেকেই একে অপরকে বলে থাকি ভালো আছি। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবি কিংবা কথাবার্তায় অনেক মানুষকেই আমরা সুখী বলে জানি। কিন্তু আসলেই কি তারা সুখী?
বাস্তবতা হলো, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাদের একধরনের অভ্যন্তরীণ শূন্যতা আছে; যেটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। এমন কিছু লক্ষণ আছে, যা দেখলে বুঝতে পারবেন, মানুষটি আদতে সুখী নন।
অসুখী মানুষের দশটি লক্ষ্য নিচে দেওয়া হলো-
১. বর্তমানকে হারানোর ভয়
যে ব্যক্তি ভেতরে-ভেতরে অসুখী, তিনি কখনোই পুরোপুরি বর্তমান মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে পারেন না। আনন্দের সময়ও তার মনে একধরনের ভয় কাজ করে—এই সুখ বুঝি বেশিক্ষণ থাকবে না। তাই বারবার ভবিষ্যতের শূন্যতা বা কষ্টের কথাই ভাবতে থাকেন, ফলে আনন্দটাও ঠিকমতো ধরা দেয় না।
২. অস্থিরতায় ভোগেন যারা
যারা ভেতরে অসন্তুষ্ট বা অখুশি থাকেন, তারা সব সময় একটা অস্থিরতার মধ্যে থাকেন। যেন তারা কিছু একটা থেকে পালাতে চাইছেন। বারবার নতুন কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন। যেমন একটা সিনেমা বা সিরিজ দেখতে শুরু করে শেষ করতে পারেন না, নতুন আরেকটা দেখতে শুরু করেন।
৩. নিজের ও অন্যের জন্য খুশি নন
যে ব্যক্তি ভেতরে-ভেতরে অসুখী, তিনি নিজের আনন্দ উপভোগ তো করতে পারেনই না, অন্যের আনন্দেও খুশি হতে পারেন না। কারও পদোন্নতি, বার্ষিকী, অর্জন বা বিয়ের খবরেও তার মনে প্রশংসা বা ভালোবাসা আসে না। বরং একধরনের হিংসা বা ঈর্ষা নিঃশব্দে কাজ করে।
৪. স্বীকৃতির অভাব বোধ
সত্যিকারের সুখী মানুষ অন্যের প্রশংসা বা স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করেন না। তিনি নিজের ভালো লাগা, নিজের লক্ষ্য এবং প্রিয় মানুষদের জন্য কাজ করতেই বেশি মনোযোগী থাকেন। অন্যদিকে যিনি ভেতরে-ভেতরে অখুশি, প্রায়ই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভোগেন এবং সেই ঘাটতি পূরণ করতে অন্যের স্বীকৃতি ও প্রশংসা খুঁজে বেড়ান তিনি।
৫. চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ
যারা ভেতর থেকে অসন্তুষ্ট থাকেন, তাদের মুখে প্রায়ই বিরক্তি ও অস্বস্তির ছাপ দেখা যায়। আবেগ ধরে রাখতে পারেন না। ফলে খিটখিটে হয়ে পড়েন, হঠাৎ রেগে যান বা সহজেই কেঁদে ফেলেন। এমনকি খুব ছোট বিষয়েও তারা আহত বোধ করতে পারেন কিংবা সামান্য পরিবর্তনেই মন খারাপ করে দূরে সরে যান।
৬. অতিরিক্ত চিন্তা
অসুখী মানুষের আরেকটি অদৃশ্য লক্ষণ হলো অতিরিক্ত চিন্তা। ছোটখাটো সিদ্ধান্ত হোক কিংবা পুরোনো কোনো সম্পর্ক—সবকিছু নিয়েই তারা বারবার ভাবেন, বিশ্লেষণ করেন। ফলে মনের ভেতর একটা অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যা তাদের শান্ত থাকতে দেয় না।
৭. শূন্যতা অনুভব করেন
যদি কারও ভেতরে গভীর অসুখী ভাব বাসা বাঁধে, তাহলে বাইরের কোনো সাফল্য, যেমন পুরস্কার, প্রশংসা, পদক বা বড় কোনো অর্জন তাকে সত্যিকারের শান্তি দিতে পারে না। যত খেতাবই তিনি অর্জন করেন না কেন, মনে হবে, কিছু একটা এখন অসম্পূর্ণ। যেন আরও কিছু চাই, অন্য কিছু চাই। এই অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা তার মনে থেকেই যায়।
৮. ঘুম না হওয়া
পরিমাণ মতো ঘুম না হওয়া অসুখী মানুষের একটি লক্ষণ। তারা প্রায়ই ইনসমনিয়ায় ভোগেন। বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করেন, ভাবনার জাল বুনতে থাকেন, নানা কল্পনায় ডুবে যান। কিন্তু ঘুম আর আসে না।
৯. একাকিত্ব মানতে পারেন না
যারা ভেতরে-ভেতরে খুশি নন, তারা নীরবতা বা একাকিত্ব সহজে মেনে নিতে পারেন না। সব সময় যেন কিছু না কিছু করে সেই শূন্যতা ঢাকতে চান। তারা কখনেও অকারণে কথা বলেন, কখনে কারও সঙ্গে আড্ডা দেন কিংবা কাউকে ফোন করে ব্যস্ত থাকেন—শুধু যেন নিঃশব্দ মুহূর্তটা অনুভব না করতে হয়।
১০. নিজেকে অবমূল্যায়ন
যারা অসুখী ভেতরে-ভেতরে ও অপূর্ণতার অনুভব নিয়ে বাঁচেন, তারা প্রায়ই নিজেকে অবমূল্যায়ন করেন। মনে করেন, তারা কখনোই ‘যথেষ্ট ভালো’ বা ‘পারফেক্ট’ নন। নিজেকে বোঝা মনে হয় এবং নিজের সঙ্গেই নিজে বাজে আচরণ করেন। ক্রমাগত নিজেকে দোষারোপ করেন।
সূত্র: এমএসএন
এস এইচ/
Discussion about this post