বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রয়াত এম আই ফারুকীর বর্ণাঢ্য জীবন ও আইনাঙ্গনে তার অসামান্য অবদানের স্মরণে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার (২৯ জুন) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হক। তিনি বলেন, প্রয়াত এমআই ফারুকী ২০০১ সালে সিনিয়র আইনজীবী হন এবং তার হাত ধরে জনস্বার্থ মামলা এবং জুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিজমের দ্বার উন্মোচন করেছেন। তিনি শিশু অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে গেছেন। পরিবেশ সুরক্ষায় টু-স্ট্রোক তিন-চাকার পরিবহন নিষিদ্ধ করার জন্য জনস্বার্থ মামলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আসামির বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড রোধ করার জন্য অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি যৌনকর্মীদের অবৈধ উচ্ছেদ নিয়েও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব যার গমন আমাদের অভিভাবকশূন্য করে রাখবে সবসময়।
অনুষ্ঠানে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ফারুকীকে স্মরণ করা জরুরি আমাদের নিজেদের জন্যই, যেন তার করে যাওয়া কাজগুলো চর্চা করতে পারি। তিনি অবসরের পর বিচারকদের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেওয়ার প্রথার বিরোধিতা করতেন এবং বিশ্বাস করতেন, এ ধরনের অনুশীলন বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
সভায় উপস্থিত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, এমআই ফারুকী স্যারের প্রয়াণ আমাদের আইন অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় অভাব রয়ে যাবে। তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আমরা দেখতে পাব আইনের বিভিন্ন জার্নালে। তিনি অনেক মেধাবী আইনজীবী তৈরি করে গেছেন যার মাধ্যমে উনি বেঁচে থাকবেন আমাদের সবার মাঝে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান বলেন, উনি বেঁচে থাকবেন ওনার কাজের মধ্য দিয়ে। উনি বেঁচে থাকবেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের কর্মময় জীবনের মধ্য দিয়ে।
এ ছাড়াও এম আই ফারুকীর সুপ্রিম কোর্টের আইনি জীবন ও মানবাধিকার বিষয়ক মামলা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার এবং এমকে রহমান এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন।
এম আই ফারুকীর পেশাগত ও চেম্বার জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজনিন নাহার দিপু, সাদিয়া আরমান, এম. শামসুল হক। পারিবারিক জীবন নিয়ে স্মৃতি চারণ করেন আইনজীবী এম আই ফারুকীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ইস্তিয়াকুর রহমান ফারুকী।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা বলেন, এমআই ফারুকী ছিলেন একজন অসাধারণ মানবাধিকার সংরক্ষক ও ন্যায়বিচারের যোদ্ধা। যার পেশাগত নৈতিকতা ও সাহসিকতা নতুন প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি আইনজীবী হিসেবে শুধু কোর্টরুমে সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং সারা জীবন মানুষ ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
এম আই ফারুকীর জনস্বার্থ মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলাসমূহ—শুকুর আলির বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের মামলা, টু-স্ট্রোক যানবাহন নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মামলা এবং আবিদ খান ও সাদাকত খান ফাক্কুর নাগরিকত্ব বিষয়ক মামলা।
এম এইচ/
Discussion about this post