অকালে প্রয়াত হওয়া সফল ও ধনী প্রযুক্তি আইকন, অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসকে আজকাল খুব একটা মনে করা হয় না। চলুন, ৩০ বছর আগে তিনি সাফল্যের যে মন্ত্র শিখিয়ে গেছেন তা একবার ফিরে দেখি।
টেক জায়ান্ট অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। অকালপ্রয়াত এই সফল ও ধনী প্রযুক্তি আইকনের কথা আজকাল কমই মনে করি আমরা। সাফল্যের ফর্মুলা খুঁজি সাম্প্রতিক সময়ের বিলিয়নিয়ারদের জীবনযাপন ও বিভিন্ন বক্তব্য আর উক্তি থেকে। অথচ স্টিভ জবস সেই ৩০ বছর আগেই সফলতার এক মন্ত্র শিখিয়ে গেছেন। আসলে তাঁর কাছ থেকে এই কথা শুনে একটু অবাকই হতে হয়।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করা এই জিনিয়াস অ্যাপল কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর একে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। অনেকটা একনায়কতন্ত্রই মনে হতো অ্যাপলের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মূলনীতিকে। অথচ তিনি যে সাফল্যের মন্ত্রটি দিয়েছেন, তা এ থেকে বেশ বিপরীতধর্মী। স্টিভ জবসের মতে, সফল হতে হলে জানতে হবে কখন কার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। একা একা কখনো সাফল্য ছোঁয়া যায় না। আর ছুঁতে পারলেও তাকে ধরে রাখা যায় না।
যাঁরা জীবনে কোনো কিছু অর্জন করতে চান, তাঁরা অনেক সময় কারও কাছে সাহায্য চাইতে দ্বিধাবোধ করেন। অনেকটা যেন আঁতে ঘা লাগে তাঁদের এতে। যেকোনো উদ্যোক্তা এটি ভালোভাবে অনুভব করতে পারবেন। স্বনির্ভর হওয়ার জন্যই তো নিজে কিছু করার চেষ্টা। সেখানে অন্য কারও সহায়তা নিলেই যেন হেরে যাওয়া হলো। কিন্তু এ চিন্তা অত্যন্ত ভুল, বলে গেছেন স্টিভ জবস।তাঁর মতে, সবকিছু নিজে ভালোভাবে করা অসম্ভব। আর তার ফলাফলও সর্বোত্তম হয় না। অতিরিক্ত আত্মনির্ভরশীলতা আর স্বাধীনতা অনেক সময় বিরূপ প্রভাব ফেলে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে। আর সবকিছু নিজে করার জাগলিং খেলার চাপে একসময় সাফল্য অধরাই রয়ে যায়। তিনি বলেন, অনেক সময় আমরা চাই না মুখ ফুটে। কিন্তু সাহায্য চাইলে করে না কেউ, এমন হয় না আসলে।স্টিভ এ প্রসঙ্গে শোনালেন এক মজার গল্প। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি হিউলেট প্যাকার্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বিল হিউলেটকে কল করে নিজের নামধাম জানিয়ে বলেন যে তিনি হাইস্কুলে পড়েন আর ফ্রিকোয়েন্সি কাউন্টার বানানোর জন্য তাঁর কিছু স্পেয়ার পার্টস লাগবে।বিল এই কল পেয়ে হেসে ওঠেন ঠিকই, কিন্তু স্পেয়ার পার্টসও দিয়েছিলেন তাঁকে। আর সে গ্রীষ্মের ছুটিতে ডাকলেন তিনি স্টিভকে খণ্ডকালীন কাজ করতে তাঁর কোম্পানিতে। স্টিভ তো আকাশের চাঁদ পেলেন যেন। এভাবে সাহায্য না চাইলে হয়তো এগোতে পারতেন না স্টিভ, বললেন তিনি।
আর স্টিভ জবসের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আইফোন। প্রথম প্রোটোটাইপে এর শক্ত কোটিং দেওয়া প্লাস্টিক স্ক্রিন যথেষ্ট মনে হচ্ছিল না স্টিভ জবসের কাছে। একদিন পকেটে নিয়ে ঘুরলেই তাতে স্ক্র্যাচ পড়ে যায়, দেখলেন এই টেক জিনিয়াস। আর এ সমস্যার সমাধান নিজেরা করতে গিয়ে অন্যান্য প্রযুক্তিগত কাজগুলো ব্যাহত না করে স্টিভ বুদ্ধি করে বিখ্যাত মার্কিন কাঁচ প্রস্তুতকারী কোম্পানি কর্নিং গ্লাসের শরণাপন্ন হলেন।এক সফল মিটিং শেষে তিনি সে কোম্পানির সিইওকে কী ধরনের কাচ লাগবে তা বুঝিয়ে দিলেন। আর এই কোলাবরেশনের ফলেই এল গরিলা গ্লাস, যা মোবাইলের স্ক্রিনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। স্টিভ জবস এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু আন্তরিক বার্তা লিখে পাঠান কর্নিং গ্লাস কোম্পানির অফিসে, যা এখনো সেখানে বাঁধাই করা আছে। এতে লেখা আছে, আপনাদেরকে ছাড়া আমরা এটা পারতাম না।
তাই স্টিভ জবস বলেছিলেন, সাহায্য চাওয়া মানেই ছোট হয়ে যাওয়া না। সঠিকভাবে চাইলে তা দুই পক্ষের জন্য সম্মানজনক। আপনি যদি কাউকে সম্মান প্রদর্শন করেন, তা আপনার কাছেই ফিরে আসবে। আপনি যে তাদেরকে বিশ্বাস করছেন, তাদের ওপরে নির্ভর করছেন, এই সন্তুষ্টির অনুভূতি থেকেই আপনাকে সাহায্য করবে লোকে।
জবসের বয়ানে, শুধু ভাবলে হবে না, করতে হবে।আর আপনাকে মেনে নিতে হবে যে ব্যর্থ হতে পারেন আপনি। সবাই যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, আপনাকে বুঝবে তা নয়। কিন্তু এতে দমে গেলে হবে না। তাই এই টেক জিনিয়াসের মতে, সঠিক সময়ে কিছু বিষয়ে সাহায্য চাওয়াটাই আপনাকে সফলতা দিতে পারে। আর কোনো কিছুই একতরফা হয় না। এভাবে একে অপরকে সাহায্য করতে গিয়েই সফল সব কোলাবরেশন গড়ে উঠেছে পৃথিবীতে। তাই চাইতে ভয় পেলে চলবে না। সংকোচ করা চলবে না কারও সাহায্য নিতে। এটাই স্টিভ জবসের মতে সাফল্যের মূলমন্ত্র।
এস এম/
Discussion about this post