অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যুবক সাগর হোসেন। একসময় মোটরসাইকেলের শোরুম, আধাপাকা বিলাসবহুল বাড়ি এবং স্বচ্ছল জীবনের ছিল তার। তবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে অনলাইনভিত্তিক জুয়া ‘ওয়ান এক্স বেট’ ও ‘গ্লোরি ক্যাসিনো’ খেলতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি।
এমন সর্বনাশা জুয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ও তওবা করার উদ্দেশ্যে তিনি জনসম্মুখে দুধ দিয়ে গোসল করেন।
শুক্রবার (৯ মে) সন্ধ্যায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের গোলাবাড়ি বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সাগর হোসেন পান্টি এলাকার মো. চাঁদ আলীর ছেলে। তার ওই ‘তওবার গোসল’-এর ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিও রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কয়েকজন সাগরের মাথায় প্লাস্টিকের মগ ও বোতল দিয়ে দুধ ঢালছেন। তাকে ঘিরে রয়েছে উৎসুক জনতা। সাগর বলছেন, আমার ছিল বিলাসিতার জীবন। পান্টিতে একটা মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। খুব শখ করে একটা বাড়ি করেছিলাম। মোবাইলের জুয়া খেলে সব হারিয়ে ফেলেছি। আপনারা শিক্ষা নেন জুয়া খেলবেন না। অসৎ পথে কেউ বড়লোক হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, দেহ শরীর সব নষ্ট করে ফেলেছি। আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলাম। তিনটি মেয়ে সন্তান আছে, তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তওবা করেছি। আর কোনোদিন মোবাইলে জুয়া খেলব না।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, পান্টি বাজার সংলগ্ন সাগরের বিক্রি হওয়া আধাপাকা বাড়িটি। পাকা প্রাচীর ঘেরা বাড়ির লোহার কেচিগেট এখনও অক্ষত। ভিতরে সাজানো-গোছানো কক্ষ, তবে নেই খাট-বিছানা বা আসবাবপত্র। সেখানে ভিড় করেছেন বহু মানুষ।
সাগর হোসেন বলেন, মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। সৎ পথে আয় করেই পরিবার গড়েছি। মাসে ৪০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতো। কিন্তু জুয়া আমাকে শেষ করে দিয়েছে। ২১ লাখ টাকায় বাড়ি, ১৫ লাখ টাকায় শোরুম বিক্রি করেও এখনো সাড়ে তিন লাখ টাকা দেনা রয়েছে।
তিনি জানান, শুরুতে ব্যবসা বন্ধ করে ধারদেনা ও সুদে টাকা নিয়ে জুয়া খেলতেন। একপর্যায়ে সবকিছু বিক্রি করেও দেনা শোধ করতে পারেননি। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
সাগরের স্ত্রী কনা খাতুন বলেন, জুয়ার কারণে বাড়ি-গাড়ি, গহনা, আসবাবপত্র সবকিছুই হারিয়েছি। এখন যে বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি, তার ক্রেতা দয়া করে থাকতে দিয়েছেন। আমি চাই, জুয়ার বিরুদ্ধে সরকার যেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়।
পান্টি বাজারের রাসেল কম্পিউটার দোকানের মালিক রাসেল হোসেন বলেন, সাগরের আগে শোরুম ছিল, ভালো গাড়ি ছিল। এখন সে ফকির। দুধ দিয়ে গোসল করে সে আজ সবার সামনে তওবা করেছে।
সাগরের প্রতিবেশী রাশিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ১০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে তাকে তওবা করিয়েছি, যেন আর কেউ এমন ভুল না করে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ঘটনার খবর পেয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এস এইচ/
Discussion about this post