যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে মার্কিন বিমানবাহিনীর সক্রিয় এক সদস্য নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আগুনে তার শরীরের অনেকটাই পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতকাল রবিবার স্থানীয় সময় বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সেনার আগুন নেভান। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, ওই ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মার্কিন বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, ওই ব্যক্তি মার্কিন বিমানবাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
মার্কিন গণমাধ্যমের খবরের বরাতে এএফপি আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং টুইচে ক্লান্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তিনি আর গণহত্যার মতো অপরাধ করতে চান না। এরপরই তিনি নিজের শরীরে তরলজাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরান। মাটিতে পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’।
এসব ফুটেজের সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি এএফপি। নিউইয়র্ক টাইমসের খবরের বরাতে এএফপি জানিয়েছে, টুইচ থেকে ওই ফুটেজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই ব্যক্তির সঙ্গে দূতাবাসের কোনো কর্মীর পরিচয় বা সম্পর্ক নেই।
ঘটনার সময় দূতাবাসের কাছেই একটি গাড়ি রাখা ছিল। গাড়িটিতে বোমা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। পরে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়িটিতে তল্লাশি চালায়। যদিও গাড়িতে বিপজ্জনক কোনোকিছুই পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি দূতাবাসের একজন মুখপাত্র মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে নিশ্চিত করেছে, এ ঘটনায় তাদের কোনো কর্মী আহত হয়নি। তবে ঘটনার পর দূতাবাস এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি কূটনৈতিক মিশনের সামনে এ ধরনের আত্মহত্যার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনি সমর্থক এক ব্যক্তি জর্জিয়া রাজ্যের ইসরায়েলি কনস্যুলেটের সামনে গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। ওই ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিবাদের উগ্রবাদী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছিল পুলিশ।
ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছিল, আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ওই ব্যক্তির পাশেই একটি পেট্রলের বোতল ও একটি ফিলিস্তিনি পতাকা পাওয়া গেছে। আগুন দেওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে একজন নিরাপত্তারক্ষীও আহত হয়েছিলেন। পরে দুজনকেই হাসপাতালে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের বন্দুকধারীদের হামলার পর গাজায় তাদের অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় ১২শ ব্যক্তি নিহত হয়। জিম্মি করা হয় ২৪০ জনকে। পরবর্তী সময়ে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে রাফাহ শহরে। মিশর সীমান্তবর্তী এই শহরে এর আগে বাস করতো মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে অনেকেই অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বা তাঁবুতে বসবাস করছে। আশ্রয় শিবিরের ভয়াবহ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।এ ঘটনায় দেশটিতে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি সমর্থকরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ জেড কে/
Discussion about this post