২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রংপুরের ৮ উপজেলা থেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে ৩৩ হাজার ১০৪ জন। যা সারা দেশের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ সময় গোটা দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৭১৬ জন। এর মধ্যে সব চেয়ে এগিয়ে আছে কুমিল্লা জেলা। এ জেলা থেকে বিদেশে গেছেন ৯ লাখ ৮৪ হাজার ২২৯ জন। যার আনুপাতিক হার ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ।
আগে রংপুর থেকে বিদেশগামী অভিবাসীর সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের সুবাদে এখন রংপুর জেলা থেকে প্রবাসীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জেলার মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রবাসীর দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আর পিছিয়ে রয়েছে তারাগঞ্জ উপজেলা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে ধীরে ধীরে রংপুর জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রবাসগামীদের উদ্বুদ্ধ করছে। জেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণমূলক সেবা প্রদানসহ নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণে কাজ করছে। যদিও রংপুরে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে অনেকেই প্রবাস জীবন বেছে নিচ্ছেন বলে মনে করছেন উন্নয়ন বিশ্লেষকরা।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সার্ভারের তথ্য অনুযায়ী জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা ৪২ হাজার ২১ জন। এর মধ্যে রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও সদর উপজেলা মিলে রয়েছে ৭ হাজার ১৭ জন, কাউনিয়ায় ২ হাজার ২১৮ জন, বদরগঞ্জে ১ হাজার ৬১ জন, পীরগঞ্জে ১ হাজার ৭২৪ জন, মিঠাপুকুরে ৮ হাজার ৫৭৯ জন, তারাগঞ্জে ১ হাজার ৮১ জন, পীরগাছায় ৬ হাজার ২৫৯ জন ও গংগাচড়া উপজেলায় ৩ হাজার ৭৩৯ জন। এর মধ্যে মিঠাপুকুর প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পীরগাছা উপজেলা। তবে সব চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে তারাগঞ্জ উপজেলা।
জানা গেছে, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিংঙ্গাপুরে অভিবাসীরা অবস্থান করছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে।
জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে বিদেশে যেমন বাংলাদেশীর সংখ্যা বাড়বে তেমনি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন প্রবাসীরা। তারা জানান, ঝুঁকিবিহীন স্বচ্ছ ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণের সঙ্গে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সরকারকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। রংপুরের মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন, তাদের অনেকের অবস্থান গর্ব করার মত। কিন্তু প্রচার প্রচারণা না থাকায় অন্যরা উদ্বুদ্ধ হতে পারছে না। এই দিকটায় খেয়াল রাখা জরুরি।
রংপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরে আসা, চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজ ও বেতন না পাওয়া, কাজের আকামা না করে যাওয়া এবং কারাগারে আটক কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে আনার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ১৩০ অভিবাসীর অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছেন।
অন্যদিকে, ২০০৯ সালে থেকে ১৫ বছরে রংপুর জেলার ৩৭৫ জন প্রবাসীর মারা যান। তাদের প্রত্যেকে তিন লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। যার পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৫৭ টাকা। ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশগামী কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন ও ফিঙ্গার প্রিন্ট করা হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৫ জনের। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে ৪৮ হাজার ৮৫৩ জন ও ফিঙ্গার প্রিন্ট ৫২ হাজার ৩৬২ জন।
রংপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের পক্ষ থেকে বিদেশগামীদের তিনদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ মাসে ৫২ জনের একটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩ হাজার ২৬৬ জন।
রংপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আমেনা পারভীন বলেন, বর্তমান সরকার প্রবাসীদের কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে রংপুর জেলায় অভিবাসনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বিদেশগামীদের নিয়ম মেনে বৈধ পথে বিদেশ গমনের পরামর্শ দেন। এতে করে এ জেলার বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি পাবে ও আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
এফএস/
Discussion about this post