কুমিল্লা সিটি কলেজের অধ্যক্ষকে বহিরাগত কর্তৃক লাঞ্ছিত করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন কলেজটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় কলেজের সামনে কোটবাড়ি-কুমিল্লা সড়কে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরে কলেজে প্রবেশ করতে চেষ্টা করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ ও জামায়াতের ইসলামের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন কুমিল্লা মহানগরী শাখার সহসভাপতি ইফতেখার আলম ভুঁইয়া এবং তার ভাই কাউসার আলম ভুঁইয়া। গেট খুলতে বিলম্ব হওয়ায় কলেজে ঢুকে তারা অধ্যক্ষকে শাসাতে থাকেন। বেশ কয়েকবার থাপ্পড় দিতে তেড়ে যান ইফতেখার ও কাউসার। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ইফতেখার আলম ভুঁইয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘একদম চুপ, কান ফাটাইয়া ফেলমু, বের হ’। আকস্মিক ঘটনায় হকচকিত হয়ে যান অধ্যক্ষ ও উপস্থিত সবাই। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অন্য শিক্ষকরা সে সময় অধ্যক্ষকে নিয়ে বের হয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালে কুমিল্লার কোটবাড়িতে সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাতা অনেক শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ইফতেখার আলম ভুঁইয়া অন্যতম। তিনি সে সময় কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ পদেও নিয়োগ পান। চার বছরের মাথায় পরিচালনা নিয়ে ঝামেলা লাগে। গুটিকয়েক পরিচালক নিয়ে কলেজ পরিচালনা করেছেন ইফতেখার। অর্থের যথাযথ হিসাব দিতে পারেননি বলে অন্য পরিচলকরা অভিযোগ করেন। এ নিয়ে অন্যান্য পরিচালকদের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে। একপর্যায়ে কলেজ প্রাঙ্গণে পরিচালক অ্যাডভোকেট আরিফুজ্জামানের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। উভয়ে উভয়কে আহত করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুজনকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। অন্য পরিচালকরা থানায় বসে প্রাথমিক মীমাংসা শেষে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।
পরবর্তী সময়ে অর্থের সুষ্ঠু হিসাব দিতে না পারায় অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পরিচালনা পর্ষদের সভায়।
একপর্যায়ে ইফতেখার তার শেয়ার তুলে নেবেন বলে জানান। মোট শেয়ার বাবদ ২৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে যান তিনি। যার চেক, ভাউচার, আপসনামা, চুক্তিপত্র রয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে।
অর্থ তছরুপের দায়ে ঘটনায় পরিচালক আরিফুজ্জামান, সেলিম রেজাসহ তিন জন বাদী হয়ে ইফতেখার আলম ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ইফতেখার আলম ও তার ভাই কলেজ দখলে নিতে দফায় দফায় কলেজে প্রবেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার কলেজে প্রবেশ করে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করেন।
এদিকে, অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত ও অবৈধভাবে কলেজে প্রবেশ করে হট্টগোল করার প্রতিবাদে বুধবার সকালে কলেজের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে সমাবেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কলেজ প্রাঙ্গণে ঢুকে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করা খুবই দুঃখজনক। আমরা অনতিবিলম্বে এর বিচার চাই।’ অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেন তারা।
এ ইউ/
Discussion about this post