মফিজুর রহমান ও আশরাফুল আলম ভূঁইয়া নামের দুই বাংলাদেশি ১১ ফেব্রুয়ারি মার্কিন ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এ দুজন স্বীকার করেছেন, তাঁরা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানব পাচারে জড়িত। তাঁরা মূলত দালাল হিসেবে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য তাঁরা ভুয়া নথিও জমা দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় পরদিন রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা মিকাইল লি। মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তাবিষয়ক এই কর্মকর্তা এর আগেও এমন পাঁচটি মামলা করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার’ অভিযোগে মিকাইল লি গুলশান থানায় প্রথম মামলাটি করেছিলেন গত বছরের ১৫ মার্চ। সেই মামলায় প্রথমে চারজনকে আসামি করা হয়েছিল। ওই আসামিরা মূলত নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ‘কথক একাডেমি’ নামের একটি এনজিওর ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছিলেন।
‘কথক একাডেমি’ নামে বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোনো এনজিও নেই। ওই চারজনের ভিসা প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। পরে মামলা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দালালদের কাছ থেকে ভুয়া নথিপত্র সংগ্রহ করে দূতাবাসকে প্রতারিত করেন। ওই চারজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ। প্রতারণার মাধ্যমে তত দিনে কয়েকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় বলেও তখন পুলিশ জানতে পেরেছিল।
সূত্রমতে, জাল কাগজপত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টাসহ মানব পাচারের অভিযোগে গত এক বছরে পাঁচটি চক্রের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করেছে মার্কিন দূতাবাস। গুলশান থানায় করা মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এবং গোয়েন্দা শাখার সাইবার ইউনিট।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়। মামলার আসামিসহ অর্ধশতাধিক তরুণের বিরুদ্ধে কাগজপত্র জালিয়াতি, অবৈধ পথে সীমান্ত পেরোনো কিংবা সীমান্তে অপেক্ষায় থাকার অভিযোগ আনা হয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ায় মানব পাচার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়।
এ বিষয়ে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের ইউনিটের সম্পর্ক ভালো। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য আদানপ্রদান হয়। মানব পাচার রোধ, জঙ্গিবাদ দমনসহ বেশ কিছু বিষয়ে একসঙ্গে কাজও করেছি।’
এছাড়া, মানব পাচার ঠেকাতে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
এফএস/
Discussion about this post