কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে সোমবার সাবা সাবা দিবস (৭ জুলাই) উপলক্ষে আয়োজিত সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। এই বিক্ষোভ চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ, যা গত বছর থেকে শুরু হয়েছে।
এদিন সকাল থেকেই নিরাপত্তা বাহিনী নাইরোবির মধ্যাঞ্চলের দিকে যাওয়ার সব প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেয়। শহরটিকে প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে।
দোকানপাট বন্ধ ও রাস্তায় পুলিশের টহল ছিল। নাইরোবির অন্যান্য অংশে বিক্ষোভকারীরা আগুন জ্বালিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। থিকা রোড ও রাজধানীর উপকণ্ঠ কিটেঙ্গেলায়ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
এ ছাড়া কামুকুনজিতে রাস্তা অবরোধ করে আগুন জ্বালায় বিক্ষোভকারীরা, যেখানে ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক সাবা সাবা বিক্ষোভ হয়েছিল।
দেশের বাকি অংশে তুলনামূলকভাবে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও কিছু সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সকালে হাজার হাজার যাত্রী ও কর্মজীবী মানুষ চেকপয়েন্টে আটকা পড়ে, যাদের অনেকেই শহরের কেন্দ্র থেকে ১০ কিলোমিটার বা তারও বেশি দূরে ছিল। কেবল কয়েকটি যানবাহনকে শহরে ঢুকতে দেওয়া হয়।
রাজধানীর ভেতরে প্রেসিডেন্ট ভবন ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর পথ রেজার ওয়ায়ার দিয়ে আটকে দেওয়া হয়।
কয়েকটি স্কুল শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকতে বলেছে। বহু যাত্রী সোমবার সকাল পর্যন্ত শহরের বাইরে আটকে ছিল। দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া অনেক বাস পার্ক করা ছিল শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে কাবেতে। যাদের মোটরবাইকে চড়ে যাওয়ার মতো বাড়তি টাকা নেই, তারা সেখানেই রয়ে গেছে।
বাসচালক হাম্পফ্রে গুম্বিশি বিবিসিকে বলেন, ‘গত রাত সাড়ে ৮টায় আমরা রওনা হয়েছিলাম…সরকার যেন জেন-জেড তরুণদের সঙ্গে সংলাপে বসে, যাতে এই পরিস্থিতির অবসান হয়।’
পুলিশ রবিবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো মানুষের জান-মাল রক্ষা করা ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা।
সোমবারের বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল মূলত ‘জেন-জেড’ বা ‘জেন-জি’ নামে পরিচিত তরুণ প্রজন্ম। তারা সুশাসন, জবাবদিহি ও পুলিশি নিপীড়নের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছে। গত ২৫ জুন দেশব্যাপী আয়োজিত এক বিক্ষোভে অন্তত ১৯ জন নিহত হয় এবং হাজারো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুট ও ধ্বংস হয়। এই বিক্ষোভটি আয়োজন করা হয়েছিল গত বছরের করবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে।
সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলো সহিংস হয়ে উঠেছে, যেখানে ‘গুণ্ডাদের’ অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। এদের বিরুদ্ধে লুটপাট ও বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো বলছে, এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ রয়েছে, যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
একদল সশস্ত্র হামলাকারী রবিবার নাইরোবিতে কেনিয়া হিউম্যান রাইটস কমিশনের (কেএইচআরসি) সদর দপ্তরে হামলা চালায়। সেখানে নারীদের উদ্যোগে একটি সংবাদ সম্মেলন হচ্ছিল, যেখানে তারা রাষ্ট্রীয় সহিংসতার অবসান দাবি করছিলেন। কেএইচআরসির মুখপাত্র আর্নেস্ট কর্নেল বিবিসিকে বলেন, মোটরবাইকে অন্তত ২৫ জনের একটি দল এসে হামলা চালায়। ‘আজ কোনো বিক্ষোভ হবে না’ বলে তারা চিৎকার করছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘তাদের কাছে পাথর, লাঠি…ছিল। তারা ল্যাপটপ, ফোন এবং সেখানে থাকা সাংবাদিকদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয়।’
১৯৯০ সালের সাবা সাবা আন্দোলন ছিল কেনিয়ায় বহু বছরের একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে বহু দলীয় গণতন্ত্রের পথে প্রথম ধাপ। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আরাপ মইয়ের সরকার ওই আন্দোলনে কঠোরভাবে দমন-পীড়ন চালায়। অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তারপর থেকে কেনিয়ায় ‘সাবা সাবা’ হয়ে উঠেছে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার প্রতীকে পরিণত একটি দিন।
তথ্য সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
এম এইচ/
Discussion about this post