যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর গবেষণায় কাজ করছে সংস্থাটির চার সদস্যের একটি দল। এই দলে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার ছেলে মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান (তারিক)।
জানা গেছে, নাসার চার সদস্যের “লা টেক বায়োমাস” দল মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর অনন্য উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। আর এ দলটিতেই রয়েছেন লুইসিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্সের পিএইচডির ছাত্র মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান।জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের পেড়ি গ্রামে জন্ম গবেষক মোহাম্মদ তারিকুজ্জামানের। তার বাবা প্রয়াত মমতাজ উদ্দিন। মা মালেকা খাতুন। পাঁচ বোন ও তিন ভাই তাদের। ভাইদের মধ্যে তারিকুজ্জামান সবার ছোট। তিনি বেড়ে উঠেছেন নিজ উপজেলা কেন্দুয়া এবং ময়মনসিংহ শহরে।
মোহাম্মদ তারিকুজ্জামানের সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কথা হলে তিনি মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর গবেষণায় নাসার গবেষণা দলে জায়গা করে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন, “বর্তমানে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার “লা টেক বায়োমাস” দল মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর অনন্য উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। আমরা মানুষের মূত্র ব্যবহার করে মাটি ছাড়া মহাকাশে কৃষি চাষের সম্ভাবনা দেখছি। আমাদের দলটি আরও নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কারের কথা ভাবছে।”
তারিক বলেন, “এরকম গবেষণাসহ আগামী জীবনে আমি সকলের কাছে দোয়া চাই। এ সম্মান যেমন আমাদের পরিবারের, তেমনি দেশের। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণায় বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম-সম্মান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবো, এমনটাই প্রত্যাশা করি।”পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান তার শিক্ষাজীবনে নিজ ইউনিয়নের সান্দিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম, ২০০৭ সালে সান্দিকোনা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, ২০০৯ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি এবং ২০১৪ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হন। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপেই তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মেধার ছাপ রেখেছেন।
শিক্ষাজীবন শেষ করে মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ঢাকায় এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে চাকরি করেন। পরে একপর্যায়ে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতি মোহাম্মদ তারিকুজ্জামানের প্রবল আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকে বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা টেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (২০২১-২০২৩), পিএইচডি ইন মাইক্রো অ্যান্ড ন্যানোস্ক্যাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (২০২১-২০২৫) অধ্যয়নরত আছেন।তারিকুজ্জামানের গবেষণার বিষয়ে তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “ছাত্রজীবন থেকেই তারিকুজ্জামান খুবই মেধাবী এবং জেদি প্রকৃতির ছেলে ছিল। কোনো সময়ই পড়াশোনার ব্যাপারে সে আপস করতো না। সর্বক্ষেত্রেই সে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। আমি তার সাফল্য কামনা করি।”
তারিকুজ্জামানের বড় ভাই জিলু মিয়া বলেন, “আমার ছোট ভাইয়ের এমন সাফল্যে আমরা অনেক বেশি আনন্দিত এবং গর্বিত। তার এ সম্মান যেমন আমাদের পরিবারের, তেমনি দেশেরও। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে ছোট ভাই গবেষণায় বাংলাদেশের হয়ে সুনাম ও সম্মান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।”
এস এম/
Discussion about this post