পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার (৭মে) স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে মস্কোর গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেসের সুসজ্জিত সেইন্ট অ্যান্ড্রিউ হলে শপথ নেন তিনি।
মার্চে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৮৭.২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন এই নেতা। সরকারি-বেসরকারি সব টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে।
বিলাসবহুল মোটর শোভাযাত্রায় গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্রাসাদে আসেন পুতিন। এরপর প্রাসাদের করিডোর দিয়ে লালা গালিচা বিছানো পথ দিয়ে হেঁটে সেন্ট অ্যান্ড্রু হলে যান তিনি। সেখানেই সংবিধানে হাত রেখে আরও ছয় বছর মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার জন্য শপথ নেন পুতিন। এরপর সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ
এ সময় রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের ফাদারের কাছ থেকে আশীর্বাদও নেন পুতিন।
পুতিনের শপথ অনুষ্ঠানে দূত পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশ। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, রাশিয়ার নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বিবেচনা করেনি যুক্তরাষ্ট্র। তাই পুতিনের শপথ অনুষ্ঠানে কেউ যাচ্ছেন না।
যুক্তরাজ্য ও কানাডা জানিয়েছে, তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য কাউকে পাঠাবে না। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারাও এতে অংশ নেবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক মুখপাত্র বলেছেন, ২০ টি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র এই অনুষ্ঠান বয়কট করবে। তবে ফ্রান্স, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়াসহ ৭টি ইইউভুক্ত দেশ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
১৯৯৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ভ্লাদিমির পুতিন । পরে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিনের বদন্যতায় ১৯৯৯ সালে প্রথমাবরের মতো রাশিয়ার অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ওই বছর পুতিনের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে রাজনীতি থেকে অবসরে গিয়েছিলেন ইয়েলেৎসিন।
পরে ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতেন পুতিন। ২০০৪ সালের নির্বাচনে ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ফের প্রেসিডেন্ট হন।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ার সংবিধানেও কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে থাকার অনুমতি ছিল না। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজের বিশ্বস্ত অনুসারী দিমিত্রি মেদভেদেভকে তিনি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান এবং নিজে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হন। সেই নির্বাচনে মেদভেদেভ এবং পুতিন— উভয়ই জয়ী হয়েছিলেন।
কিন্তু ২০১২ সালের নির্বাচনে ফের জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল ৪ বছর থেকে ৬ বছরে উন্নীত করেন এবং দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীতা না করার যে বাধ্যবাধকতা ছিল— তা বাতিল করেন। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি।
রাশিয়ায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রেসিডেন্টের পদে থাকার রেকর্ডের মালিক সাবেক সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন। টানা ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। শপথগ্রহণের পর এবারের মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারলে স্ট্যালিনকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হবেন পুতিন।
এ এ/
Discussion about this post