ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে আবারও হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। শনিবার ভোরে রাতে, হুতি ঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান ও সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে পশ্চিমা জোট। তবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে মার্কিন সেনা মোতায়েনের কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
এদিকে, হুতিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে গোটা ইয়েমেনজুড়ে। রাজধানী সানাসহ বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভকারীরা হামলা বন্ধের দাবিও জানিয়েছে। এমনকি বিক্ষোভ হয়েছে আমেরিকাতেও। সেখান থেকে হুতিদের উপর হামলা বন্ধের কথাও জানিয়েছেন মার্কির্নিরা।
একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি এবং হুতিদের টেলিভিশন চ্যানেল আল-মাসিরাহ জানিয়েছে শনিবার ইয়ামেনের রাজধানী সানায় এই হামলা চালানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার হুতিদের লক্ষ্য করে ইয়েমেনে হুতি নিয়ন্ত্রিত ৩০টি অঞ্চলে প্রতিরোধমূলক হামলার পর আবারও এই হামলা চালানো হলো।
দ্বিতীয় দফায় ইয়েমেনের রাজধানী সানার কাছে একটি বিমানঘাঁটি ও উপকূলীয় শহর হোদেইদাহতেও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া একাধিক স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে স্থানীয়রাও। বিমান হামলার পাশাপাশি সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইয়েমেনের বিভিন্ন জায়গায় বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আগের দিন শুক্রবার হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোরে ইয়েমেনের কয়েকটি শহরে হামলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন হুতি কর্মকর্তা আবদুল কাদের আল-মোরতাদা।
তবে, দ্বিতীয় দফা হামলায় এখনও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এটিকে ফলো-আপ-অ্যাকশান হিসেবে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে মার্কিন সেনা মোতায়েনের কোনও পরিকল্পনা নেই।
পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন, ইরানপন্থি হুতিদের ওপর মার্কিন-ব্রিটিশ হামলার ভালো প্রভাব রয়েছে। কারণ লোহিত সাগরে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটে হুতিদের হামলায় ৫০টির বেশি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মার্কিন সেনাবাহিনী যে কোনও পাল্টা হামলার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা অব্যাহত রাখবে।
রাইডার আরও বলেছেন, কেউ এটিকে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত হিসেবে দেখতে চায় না। তবে এমন বিপজ্জনক ও বেপরোয়া আচরণ তারা মেনে নেবে না।
প্রথম হামলার পর ইয়েমেনে হুতিদের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-ইজি বলেছেন, এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে চরম মূল্য দিতে হবে। ইয়েমেনের টিভি চ্যানেল আল-মাসিরাহ তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এই নির্লজ্জ আগ্রাসনের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।
বৃহস্পতিবারের হামলায় যুদ্ধবিমান ও টমাহক মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো হয়। লোহিত সাগরে হুতিদের টানা জাহাজ-হামলা বন্ধ করতে আকাশ, স্থল ও সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এই হামলাগুলো রাডার সিস্টেম, ড্রোন স্টোরেজ ও লঞ্চ সাইট, ব্যালিস্টিক মিসাইল স্টোরেজ ও লঞ্চ সাইট এবং ক্রুজ মিসাইল স্টোরেজ ও লঞ্চ সাইটকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়।
এদিকে ইয়েমেনে হামলার প্রতিবাদে রাজধানী সানার ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে মানুষ। সমাবেশে যোগ দিয়ে খোদা মহান, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল নিপাত যাক এবং ইসলামের জয় হোক ধ্বনিতে স্লোগান দেয় হাজারো মানুষ। তারা বলেন, আমাদের ভূমি, সাগর রক্ষায় লড়াইয়ের জন্য সবাই প্রস্তুত।
ইয়েমেনে এমন গণবিক্ষোভ প্রায়ই দেখা গেলেও শুক্রবারের এই বিক্ষোভ-সমাবেশ ছিল অপ্রত্যাশিত রকমের বড়। বিক্ষোভে যোগ দেয়া হুথি সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ আলি আল-হুথি যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করে বলেন, ইয়েমেনে আপনাদের হামলা সন্ত্রাস। যুক্তরাষ্ট্র একটা শয়তান।
এদিকে, ইয়েমেনের হুতিদের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও। ওয়াশিংটনে কয়েকশ’ মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। অবিলম্বে যুদ্ধ ও ইয়েমেনে হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, লোহিত সাগরে চলাচল করা জাহাজগুলোর ওপর হুতিদের হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনের হুতি অবস্থানে হামলা চালায়। ইয়েমেন জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জঙ্গি বিমান, জাহাজ এবং সাবমেরিন থেকে এই হামলা চলে। হুথিরা বলেছে, তারা এই হামলার জবাব দেবে এবং লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজেও তাদের হামলা বন্ধ হবে না।
এ জেড কে/
Discussion about this post