১৯৭৫ সালের পর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সবচেয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বড় বড় কথা শুনি, আন্দোলন করে সরকার হটিয়ে দেবে। তার মধ্যে জামায়াত-বিএনপি বুঝলাম। আমাদের কিছু বামপন্থী দল আছে তারাও লাফায়। তারাও আন্দোলন করবে, বিপ্লব করবে। আমাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। জনগণ, আমার দলের নেতাকর্মীরাই মানবঢাল তৈরি করে বারবার বাঁচিয়ে দিয়েছে।
আমি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারি তার জন্য অনেক রকম চক্রান্ত হয়েছে। তারপরও আসতে আসতে এই পঞ্চম দফায় এসে গেছি। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, হাজার চেষ্টা করে, মিথ্য অপবাদ ছড়িয়ে, দেশে-বিদেশে নানা তদবির করেও জনগণকে ঠেকাতে পারেনি। জনগণ সতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। নতুন ও মহিলা ভোটাররা আরও বেশি মাত্রায় এবার ভোট দিয়েছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
বাংলাদেশটা এই ১৫ বছরে বদলে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের মানুষের আর্ত-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। গ্রাম পর্যন্ত মানুষের উন্নতি হয়েছে। একটা আদর্শ নিয়ে না চললে কোনও দেশের উন্নতি করা যায় না। এই আদর্শ আমাদের শিখিয়েছে ২১, একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি ত্যাগের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে মহান আত্মত্যাগ দেশের মানুষ করেছে, তার মধ্য দিয়ে আজ বাংলাদেশ আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এদেশের মানুষকে আরও উন্নত জীবন দিতে চাই। সেই পরিকল্পনা নিয়েই আওয়ামী লীগ কাজ করে যায়। মানুষের জন্য কাজ করেই বলেই আওয়ামী লীগ আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করেছে। যার ফলে বারবার তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। বিএনপির এক নেতার পিতা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্য সচিব ছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবে এদেরও চক্রান্ত ছিল। নগদ টাকা দিয়ে কেনা খাদ্যের জাহাজকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষ ঘটানোর কারণে জিয়াউর রহমান তাকে পুরষ্কৃত করেছিল, মন্ত্রী বানিয়েছিল। তাদের কাছে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়, বড় বড় কথা শুনতে হয়। তাদের অপকর্মগুলো আমাদের জানা আছে, হয়তো সময় আসলে সেগুলো প্রকাশ হবে।
একটা দেশের স্বাধীনতা, বিজয়কে ব্যর্থ করার চক্রান্তের জন্যই জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়– উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে তাকে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা, কৃত্রিম উপায়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, অপবাদ ছড়ানো, নানা ধরনের বদনাম করে জাতির পিতাকে মানুষের মন থেকে দূর করার চেষ্টা করেছে। যখন দেখেছে বঙ্গবন্ধুর ওপর বাঙালির যে আস্থা, বিশ্বাস তখনও অটুট। তারপরই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, এক শ্রেণির আঁতেল ছিল। স্বাধীনতার পরপরই লিখতো— শেখ মুজিব আন্দোলনে সফল, কিন্তু ভালো প্রশাসক ছিলেন না। তাদের বলবো, আজ রাষ্ট্র পরিচালনা করতে এসে প্রতিটি জায়গায় হাত দেই, প্রত্যেকটা কাজের ভিতটা বঙ্গবন্ধু করে দিয়ে গেছেন। কেউ যদি সচেতন না থাকেন, এই দেশটাকে স্বাধীন করবেন সেটা তার চিন্তায় না থাকে ১০ মাসের মধ্যে এই রকম একটা সংবিধান উপহার দিতে পারতেন না, দেশকেও স্বাধীন করতে পারতেন না, দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিতে পারতাম না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একটা কালো অধ্যায়। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হতো ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। হয়তো এত সময়ও লাগতো না।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. নুরুল হুদা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।
এ এস/
Discussion about this post