চট্টগ্রামের মুরাদপুর উপজেলায় মঙ্গলবার কোটাবিরোধী আন্দোলনকালীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ চলাকালে একটি ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের ১৫ জন নেতাকর্মীদের ফেলে দেওয়া হয়। এতে তারা সবাই গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পার্কভিউ হাসপাতালে।
বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় দুটি হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন সুদীপ্ত পাল। এছাড়াও পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন মেহেদী হাসান, জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ জুবায়ের, মো. আলমগীর হোসেন, মো. সোহেল ও শ্রাবণ। এর মধ্যে জালাল ও আলমগীরের অবস্থা বেশ গুরুতর।
আহত বাকি নয়জনের মধ্যে আটজন পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপরজন ছাত্রলীগ কর্মী ইমন ধর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত নেতারা চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনির অনুসারী বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নুরুল আজিম রনি বলেন, “পাঁচ তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ১৫ কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন একজন এবং পাঁচজন আছেন পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে। এর বাইরে পাথর এবং ছুরিকাঘাতে আহত আটজন পার্কভিউ হাসপাতালে এবং একজন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।”
নির্মমভাবে পিটিয়ে আহতের পর অন্তত ১৫ ছাত্রলীগ কর্মীকে পাঁচ তলা থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি শুরু থেকে কর্মসূচিতে ছিলাম। বিনা কারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ২০ জন কর্মী একটি পাঁচ তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিল।”
৮০ জনের বেশি আহত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, “৭১ জনের নাম এন্ট্রি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক অনেকের নাম এন্ট্রি করা যায়নি। বর্তমানে ১১ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে একজন আইসিইউতে, দুজন ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে, দুজন নিউরো সার্জারিতে, তিনজন অর্থোপেডিক সার্জারি অ্যান্ড ট্রমালোজিতে এবং তিনজন অন্যান্য ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”
পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, “সংঘর্ষে আহত ৪০ জনের মতো আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা আছেন। অধিকাংশকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৫ জন বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। ছয়জন আইসিইউতে ছিলেন। এর মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আইসিইউতে থাকা একজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হয়তো তাদেরও ঢাকায় পাঠাতে হবে।”
এদিকে এ ঘটনায় বুধবার সকালে আহত ইমন ধরের মা সুমি ধর বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সুমি ধর বলেন, “আমার ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাকেসহ ১৫ জনকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।”
তবে তাদের ফেলে দেওয়া হয়নি বরং হামলার পর পালাতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের চট্টগ্রামের সদস্য মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, “ওই পাঁচ তলা ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল কর্মী আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। এতে কয়েকজন ছাত্র আহত হন। একপর্যায়ে তাদের ছাদ থেকে নামিয়ে আনা হয়। ছাদ থেকে কাউকে ফেলে দেওয়া হয়নি। তারা ভয়ে পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “মঙ্গলবার সংঘর্ষ চলাকালে বাসার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। বুধবার সকালে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।” সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন
টিবি
Discussion about this post