নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে জড়িয়ে নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
এই মামলায় খালাসের মধ্য দিয়ে বিগত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের হওয়া সব মামলা থেকে খালাস পেলেন খালেদা জিয়া। তার আইনজীবীরা বলেছেন, বিগত দুটি সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৩৭টি মামলার সব কটিতে খালাস পেয়েছেন তিনি। এর ফলে বিএনপি চেয়ারপারসন এখন মামলামুক্ত হয়েছেন।
গতকালের রায়ে নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালাস পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম ।
এদিন ১১টা ২৪ মিনিটে রায় ঘোষণা করতে বিচারক এজলাসে ওঠেন। শুরুতে বিচারক বলেন, প্রশ্ন হতে পারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কীভাবে আসামির আত্মপক্ষ শুনানি করা হলো। ডিএলআর-এর পাতা ১৭ থেকে ২১ পাতায় এ বিষয়ে বলা আছে। কোনো আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরায় থাকলে তার অনুপস্থিতিতে আত্মপক্ষ শুনানি করা যায়। আবার রায়ও দেওয়া যায়। সেই অনুযায়ী রায় দেওয়া হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, একই ধরনের মামলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল। সেই মামলা চলে নাই, তবুও এ মামলার ফুল ট্রায়াল হয়েছে। আসামি সেলিম ভূঁইয়ার এই মামলায় একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। জবানবন্দির আগে তিনি চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরে তিনি তা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। সেখানেও বলেছেন তাকে শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
বিচারক বলেন, মামলা তেজগাঁও থানার। কিন্তু তাকে রাখা হয় গুলশান থানায়। সেখানে নির্যাতনের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষ এটা ডিনাই করছে। তাদের এটা জানাও নাই। রেকর্ডে দেখা গেছে, তাকে যে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বহির্বিভাগের টিকিটও আছে। তাকে বাইরে থেকে ওষুধও কিনে দেওয়া হয়। এর রসিদও আছে।
বিচারক বলেন, সেলিম ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে ফোর্সফুলি ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সে কারণে এই ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ট্রু বলার সুযোগ নাই। এর উদ্দেশ্য হলো গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, কাশেম শরীফসহ অন্যদের জড়িত করার জন্য জোরপূর্বক এই জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের জড়িত করে এই মামলা করা হয়েছে। তাই সব আসামিকে বেকসুর খালাসের রায় ঘোষণা করা হলো।
এদিকে মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। তার পক্ষে আইনজীবী হাজিরা দেন। জামিনে থাকা অপর আসামিরা আদালতে হাজির হন। এদিকে সব আসামি খালাস পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
রায় শেষে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা রায়ে খুশি। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে মামলাটি করা হয়েছিল বলে বিচারক বলেছেন। আমরা চাই তার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ তাকে দেওয়া হোক। আর যখন মামলাটি হয়েছিল, তখনকার দুদক কমিশনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের অনুরোধ রইল।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ঠিক করেন। তার আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
এ ইউ/
Discussion about this post