লাল-সুবজের পতাকা নিয়ে বিশ্ব পরিব্রাজক নাজমুন নাহার ১৭৩ দেশ ভ্রমণের ব্যক্তিগত মাইলফলকটি স্পর্শ করেছেন। ১৭৩তম দেশ হিসেবে ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়েন আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কার ভ্রমণের মাধ্যমে। গৌরবময় এই নারী নাজমুন নাহার বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে এভাবেই দুর্বার গতিতে লাল সবুজের পতাকা ও বিশ্ব শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন মানুষের মাঝে।
রবিবার মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানানারিভো ছাড়া আগে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাজমুন নাহার নিজেই। তিনি জানান, ‘এবারের ভ্রমণটি ছিল বেশ দুর্ধর্ষ ও কষ্টসাধ্য অভিজ্ঞতার। মঙ্গোলিয়া, সিরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সী শেল ও মাদাগাস্কার—প্রতিটি দেশের অভিজ্ঞতাই ছিল একেকটার চেয়ে ভিন্ন।’
নাজমুন আরও বলেন, যেখানে নারীদের জন্য বন্ধ রয়েছে জানালা, কঠিন থেকে কঠিনতম আফগানিস্তানের খাইবার পাসের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল অতিক্রম করে জালালাবাদ থেকে কাবুল রওনা হই। অস্ত্র জড়ানো অগণিত তালেবান সিকিউরিটি চেকপোস্টের মুখোমুখি হয়ে নানান প্রশ্নের জবাব দিয়ে পার হতে হয়েছে আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি পথ।
অচেনা সেই দুর্গম পথে বোমা হামলার আতঙ্ক, শঙ্কা প্রতি মুহূর্তেই ছিল সঙ্গী। কাবুল পৌঁছানোর পর সাথে ছিল তার দুইজন গাইড। কাবুলের বিভিন্ন এতিমখানা ও স্কুল সফর করি তালেবানের অনুমতিপত্র নিয়ে, সেখানে ছবি তোলা ছিল সম্পূর্ণ নিষেধ।
রমজানের প্রথমেই নাজমুন অভিযাত্রা শুরু করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং দেশগুলো ভ্রমণের মাধ্যমে। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল মানব কল্যাণে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। তাই আরএফসি- রামাদান ফ্যামিলি কমিটমেন্টের অ্যাম্বাসেডর হয়ে ‘সাফার ফর পিস’-এর এই অভিযাত্রায় শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে নাজমুন যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আফ্রিকান কন্টিনেন্টের দেশ সী শেল এবং পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ মাদাগাস্কার ভ্রমণ করেন।
এই ৫টি দেশে নাজমুন ভ্রমণ করেন ৫৬ হাজার ৭৭ কিলোমিটার পথ। যা ছিল অত্যন্ত দুর্গম এবং কঠিনতম দেশ ভ্রমণের অংশ। এই সফরে বাংলাদেশের পতাকা বাহনের পাশাপাশি ইউকে বেসড টিভি চ্যানেল, চ্যানেলে এস এর উদ্যোগে ২৬টি চ্যারিটিকে সহযোগিতার জন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন নাজমুন।
বাংলাদেশি এই পরিব্রাজক জিম্বাবুয়ে ভ্রমণের মাধ্যমে শততম দেশ পূর্ণ করেছিলেন ২০১৮ সালের ১ জুন। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবরে তিনি ১৫০টি দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু এখনো তিনি থেকে নেই। লাল-সবুজের পতাকা হাতে তার জয়যাত্রা চলছেই।
এরমধ্যে নাজমুন ব্রিটেন থেকে পেয়েছেন ইনস্পিরেশনাল উইমেন্স আওয়ার্ড। দেশ-বিদেশে তার ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৫৫টির মতো অ্যাওয়ার্ড। তিনি পড়াশোনা করেছেন সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে।
নাজমুন নাহারের ২৪ বছরের এই বিশ্ব ভ্রমণ প্রতিটি দেওয়াল ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। আলোকিত এই নারীর পৃথিবী ভ্রমণ এবং তার মহৎ কাজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্ব মানবতার জয়গান।
টিবি
Discussion about this post