১৮ বছর বয়স মানে দু:সহ, এ বয়স মানে না কোনো বাধা। এ কথা তো কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আগেই বলেছিলেন তার বিখ্যাত ‘১৮ বছর বয়স’ কবিতায়। সেই উক্তি যে মোটেও অত্যুক্তি ছিলো না তারই প্রমাণ জিসান। পুরো নাম আব্দুর রহমান জিসান।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ২০শে জুলাই শনিবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। সেই মৃত্যুর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবার। আক্ষরিক অর্থেই এবার মরার ওপর পড়লো খাড়ার ঘাঁ। সেই এক শোক ভুলতে না ভুলতেই পরিবারে নেমে আসে আরেক দুর্যোগ। জিসানের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন তার প্রিয়তমা স্ত্রী মিষ্টি। কেবল ১৪ মাসের দাম্পত্য জীবন। স্বামী ছাড়া পৃথিবীটা কারাগার মনে হতে থাকে তাঁর। অসহনীয় সেই শোককে আর শক্তিতে পরিণত করা হলো না মিষ্টির। বরং মেনে নিলেন তার প্রিয়তম স্বামী এখন না ফেরার দেশে। আর নিজেই বেছে নিলেন স্বামীর কাছে যাবার পথ। গত সোমবার আত্মহত্যা করেন মিষ্টি।
১৪ মাস আগে জিসান ভালোবেসে বিয়ে করেন রাবেয়া মিষ্টিকে। তার বাবা একজন প্রবাসী। জিসানের মা-স্ত্রী ও একমাত্র বোনকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ এলাকায়। পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন জিসান আহমেদ। এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার দিন যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে ২ নম্বর গলিতে দোকানে পানি সরবরাহের সময় শ্বশুরবাড়ির সামনেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এরপর ঢাকা মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
জিসানের মৃত্যুর খবর পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে আসেন বাবা বাবুল সরদার। সড়ক দুর্ঘটনার ভয়ে ছেলেকে মোটরসাইকেল পর্যন্ত কিনে দেননি তিনি। তবুও সন্তানকে ধরে রাখতে পারলেন না । তিনি বলেন, ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন পুত্রবধূ মিষ্টি। সারাদিন স্বামীর প্যান্ট-শার্ট নিয়ে বসে থাকতো সে। খাওয়া দাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। সোমবার সকালে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এস আর/
Discussion about this post